জামায়াতের পক্ষে কখনোই সর্বজনীন রাজনৈতিক দল হয়ে উঠা সম্ভব নয়৷জামাতের পক্ষে কখনোই সর্বজনীন রাজনৈতিক দল হয়ে উঠা সম্ভব নয়৷ জামাতের রাজনীতি যারা করেন তারা মূলত মুসলমানদের মধ্যে নিজেদের অ্যারিস্ট্রোকেট পোর্শনের পার্ট হিসেবে কাউন্ট করা একটা অংশ। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন যেসব অঞ্চলে জামাতের কিছুটা প্রভাব রয়েছে, সেসব অঞ্চলের জামাত নেতাদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল, কিংবা চিন্তা ভাবনা বা শিক্ষায়ও তারা গড়পড়তা সাধারণ মুসলমানের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। অর্থ্যাৎ জামাতকে সমর্থন করতে গেলে আপনাকে কিছুটা পড়াশোনা জানা এলিট মুসলমান হতে হবে৷ অনেকটা বাংলাদেশের বাম রাজনৈতিক দলগুলোর মত৷ আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির সমর্থক হতে আপনার সেই পড়াশোনার দরকার নাই, মানে লোকজন এতো আইডিওলোজি বুঝে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি করে না৷ গ্রামের সাধারণ মানুষ চাইলেই আওয়ামী লীগ বা বিএনপি করতে পারে, কিন্তু চাইলেই একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে জামাত করা সম্ভব নয়৷ অর্থ্যাৎ আপনাকে জামাত করতে হলে তুলনামূলক আপার ক্লাস মুসলমান হতে হবে৷
অজপাড়াগাঁয়ের কোন সাধারণ কৃষক কিংবা কোন রিকশাওয়ালা জামাতকে ভোট দেয় না৷ কিছু নির্দিষ্ট অঞ্চলে হয়তো দেয়, কিন্তু সেসব অঞ্চলে জামাত বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মতোই ফাংশন করে৷ অর্থ্যাৎ সেখানে এই জটিলতা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে জামাত৷
গত ১৭ বছর যেহেতু জামাত কার্যত নিষিদ্ধ ছিলো, কাজেই জামাত বলতে গেলে একচ্ছত্রভাবে ইসলামের ঝান্ডাধারী একমাত্র সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পায়। তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ যারা ইসলামি শাসনব্যবস্থা চায়, তারা জামাতের বা শিবিরের সিম্প্যাথাইজার ছিলো৷ কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই জানতো না বা বুঝতো না যে জামাত আসলে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার বা ইসলাম কায়েম করার দল না৷ কিন্তু ৫ ই আগস্টের পরে খিলাফত চাওয়া ইয়াং জেনারেশন জামাতের রাজনীতিটা বুঝে গিয়েছে। বর্তমানে ইসলামের যে ঝান্ডা সেটা জামাত কিংবা শিবিরের কাছ থেকে হিযবুত তাহরীর, আসিফ আদনান, শামসুল আরেফিন শক্তি গ্রুপ ছিনিয়ে নিয়েছে৷ কাজেই ধর্মীয় কার্ড খেলে জামাতের পক্ষে আর ইসলাম কায়েম করতে চাওয়া তরুণ প্রজন্মকে কাছে টানা কঠিন।
লক্ষ্য করলে দেখা যায় জামায়াত আসলে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির মত বড় রাজনৈতিক দল হওয়ার চেয়ে দেশের ভিতরে ডিপ স্টেইট টাইপ তৈরি করে ক্ষমতা দখল করতে চাওয়াকেই বেশি প্রেফার করে ৷ ৫ আগস্টের পর যেমনটা দেখা গিয়েছে, জামাত প্রশাসনের কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদ নিতে চেয়েছে৷ জামাত চেয়েছে দেশের ভিতরে একটা ডিপস্টেইট কায়েম করে দেশকে কন্ট্রোল করতে৷ যদিও জামাত সেখানেও সেভাবে সফল হতে পারে নি৷
সর্বোপরি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় সেটি হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জামাত এবং ইসলামি ছাত্র সংঘের ভূমিকা৷ বিশেষত ইসলামি ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে যারা যুক্ত তারা এখনও ৭১ এ জামাতের অবস্থানকে সঠিক বলে বিবেচনা করেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতার ভুজুং দিয়ে তারা তাদের অতীতকে ঢাকতে চাইলেও, একটা গণহত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ততা জামাতের রাজনীতিকে পুরোপুরি শেষ করে দিয়েছে। জামাত যতোই চেষ্টা করুক, ৭১ সবসময় জামাতকে তাড়া করে বেড়াবে৷ কখনোই জনগণের রাজনৈতিক দল হতে দিবে না৷ দিনশেষে জামাত থাকতে চাইবে ক্ষমতাসীনদের সাথেই৷ ৪৭ এ যেমন ব্রিটিশদের পক্ষে, ৭১ এ পাকিস্তান, পরবর্তীতে বিএনপি এবং বর্তমানে অন্তর্বতীকালীন সরকারের সাথে তারা যেমন আছে৷ জামাতের রাজনীতি ক্ষমতার আশেপাশে ঘুরপাক খাবে, কিন্তু ক্ষমতার রাজনীতিতে জামাত থাকবে অপাঙক্তেয়।