বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান। রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা না গোপন মদদ?

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ৫ আগস্টের পর দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পুলিশের দুর্বল ভূমিকা এবং সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা—এই তিনটি কারণ জঙ্গি সংগঠনগুলোর সক্রিয় হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করেছে। তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে কর্মী সংগ্রহ করে সংগঠিত হচ্ছে।এ ছাড়া, জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতারা কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তাদের হাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে।

হায়দার আহমেদ
12 Min Read

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশব্যাপী ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ৪৫০টি থানা ও ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলাকারীরা লুট করে ৫,৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৬,৫১,৬০৯টি গোলাবারুদ। গণভবন থেকেও এসএসএফের অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয়। এসএসএফ জানায়, লুট হয় মোট ৩২টি অস্ত্র। লুট হওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ ও গ্রেনেডের দাম প্রায় ২৩ লাখ টাকা। তবে সব মিলিয়ে সেদিন গণভবন ও সংসদ থেকে এসএসএফের লুট হওয়া এবং নষ্ট করা সম্পদের মূল্য ছিল পাঁচ কোটি টাকা।এ ছাড়া, বিভিন্ন কারাগার থেকে শতাধিক জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারণা, লুট হওয়া অস্ত্রগুলো আন্ডারওয়ার্ল্ড বা জঙ্গিদের হাতে চলে যেতে পারে। এখনো পর্যন্ত লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের সিংহভাগ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, পাশাপাশি কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া অধিকাংশ জঙ্গিও আটক হয়নি। ফলে, দেশজুড়ে সংগঠিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার আশঙ্কা বাড়ছে।

নৈরাজ্যের শুরু হয় কোটা আন্দোলনের সময় ২৩ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলার মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা-অগ্নিসংযোগ করে ভেতরে ঢুকে সেলের তালা ভেঙে দিলে নয় ‘জঙ্গি’সহ মোট ৮২৬ কয়েদি পালিয়ে যায়। এ সময় অস্ত্র-গোলাবারুদ ও খাদ্যপণ্য লুট এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে হামলাকারীরা।  নরসিংদী জেলা কারাগারে এই হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ আসামি পালিয়ে যায়, লুট হয় ৮৫টি অস্ত্র ও প্রায় আট হাজার গুলি। এর মধ্যে কিছু কয়েদি আত্মসমর্পণ করে এবং কিছু জঙ্গি গ্রেফতার হয়। কিন্তু অধিকাংশই সরকার পতনের পর পলাতক রয়েছে৷ উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া অধিকাংশ অস্ত্র ও গোলাবারুদ। সূত্রঃ বিডিনিউজ ২৪

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ প্রথম আলোর রিপোর্ট থেকে জানা যায়,কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় কারাগারে হামলা ও কারাবন্দীদের বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের মধ্যে এখনো পলাতক যাবজ্জীবন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আছেন ৯৮ জন। পলাতক বন্দীদের মধ্যে জঙ্গি–সম্পৃক্ততার অভিযোগে গ্রেপ্তার ৭৯ জন আছেন। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি আছেন ৯ জন।

গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের বা আনসার আল ইসলামের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দীন রাহমানী। ব্লগার হত্যা সহ জঙ্গিবাদী কাজের জন্য তার বিরুদ্ধে ছিলো একাধিক মামলা।তিনি ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলার পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন৷ সেই সাজা ভোগ করা হয়ে গেছে৷ এছাড়া আরো পাঁচটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে৷ সেগুলোতে তিনি জামিন পেয়েছেন৷ আল-কায়েদার দক্ষিণ এশীয় শাখা আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্টের (একিউআইএস) সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হয়।আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামটি ইরাকি আল-কায়েদার আনসার উল ইসলাম-এর অনুকরণে নেওয়া।বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করে। সূত্রঃ ভয়েজ অব আমেরিকা

বাংলাদেশে গত ১৬ বছরে সক্রিয় জঙ্গি সংগঠনগুলো হচ্ছে, হিযবুত তাহরির, নব্য জেএমবি, আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। জেএমবি এবং হরকাতুল জিহাদ বর্তমানে দুর্বল হয়ে গেছে। তাদের সাবেক প্রশিক্ষিত জঙ্গিরাই জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। বর্তমানে হিযবুত তাহরির এবং আনসার আল ইসলাম সক্রিয় রয়েছে। তারাই প্রধান নিরাপত্তা হুমকি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরাশেখ হাসিনা সরকারের পতনে হিযবুত তাহরির সহ জঙ্গি সংগঠনগুলো জড়িতে ছিলো বলে একাধিকবার শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বলে আসছিলেন। কোটা আন্দোলনে গুপ্ত হত্যা বা স্নাইপার ব্যবহারের অভিযোগ তোলা হয়েছে জঙ্গি সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে। সেটাই প্রমাণ হয় শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সংসদ ভবন এলাকায় এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হিযবুত তাহরিরের প্রকাশ্যে মিছিল এবং শোড়াউনের পর। এছাড়া কর্মী সংগ্রহের একাধিক বুথ দেখা যায় মৌচাক মোড়, ধানমন্ডি এলাকাতে। হিযবুত তাহরিরের মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিমের বক্তব্যে স্পষ্ট হয় তারা কীভাবে সরকার পতন আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। তিনি বলেন, ” আমরা আন্দোলনে সরাসরি জড়িত ছিলাম, আমাদের ব্যানার ছাড়া। যাতে আন্দোলন বিতর্কিত না হয়।” ঢাবি, নর্থসাউথ সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া সরকারের কাছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদনও করে হিযবুত তাহরির। বিবিসি বাংলায় ইমতিয়াজ সেলিমের বক্তব্যের ভিডিও লিংক:

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের প্রকাশ্যে মহড়া, জঙ্গি ছিনতাই। কারাগারা ভেঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পর তৈরি হয়েছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। ইতোমধ্যে ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশ। সূত্রঃ যুগান্তর

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে বেড়েছে মুক্তি বুদ্ধি চর্চাকারীদের উপর হামলা, শিল্পীদের অনুষ্ঠান পন্ড করা, বই মেলায় প্রকাশকের উপর হামলা সহ বিভিন্ন ঘটনা। এসব ঘটনা তৌহিদি জনতার নামে ঘটানো হলেও বিশ্লেষকদের ধারণা নেপথ্যে রয়েছে হিযবুত তাহরির, আনসার আল ইসলাম সহ ধর্মীয় জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলো।

আই এসের পতাকা হাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা

দেশে এখন কনসার্টে হামলা, শিল্পীদের কাজে বাঁধা প্রদান, বইমেলায় প্রকাশকের উপর হামলা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙচুরে হিযবুত তাহরির এবং শিবিরের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।এছাড়া বিভিন্ন স্থানে আইএসের কালেমা খচিত পতাকা উড়তে দেখা যায়। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি সরকার। খোদ সেনাবাহিনীর সামনেই আইসিসের পতাকা উড়াতে দেখা যায় একদল মানুষকে। খোদ স্কুল কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা জঙ্গি সংগঠন আই এস এসের পতাকা নিয়ে মিছিল করছে আন্তজার্তিক গণমাধ্যমে আলোচিত হয়েছে।

৭ অক্টোবর ২০২৪ বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়,সম্প্রতি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় কালেমা খচিত কালো পতাকা নিয়ে মিছিলের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব মিছিল থেকে ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ, ইসলামের নবীকে কটূক্তির প্রতিবাদ কিংবা ইসলামি খেলাফত কায়েমেরও দাবি তুলতে দেখা গেছে। এসব ছবি ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা শেয়ার করছেন তাদের কেউ কেউ দাবি করছেন, এই পতাকা ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীর। বাংলাদেশে ইসলামি খেলাফত কায়েম করতেই তারা এই পতাকা নিয়ে মিছিল করছে।

এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে মৃদৃ প্রতিবাদী বিবৃতি ছাড়া তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এছাড়া পুলিশও দাড়িয়ে এ ধরনের কর্মকান্ড দেখলেও তারা বাধা প্রদান কিংবা বল প্রয়োগ করেনি। অর্থাৎ সরকারের কাছ থেকে এক প্রকার আশকারা পাচ্ছে, ছাড় পাচ্ছে উগ্র জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলো।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা প্রায় একই সময়ে শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলা, পুলিশের উপর হামলা সহ বেশকিছু জঙ্গি হামলা হলে হলে নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকার।জঙ্গি দমনে গঠিত পুলিশের বিশেষ ইউনিট কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বা সিটিটিসি ব্যাপক কাজ শুরু করে জঙ্গি দমনে। এক্ষেত্রে তারা বেশ সফলতাও অর্জন করে। অধিকাংশ জঙ্গিনেতা আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় নাহয় গ্রেফতার হয়। গত কয়েকবছর আর উল্লেখযোগ্য কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনাও ঘটেনি। জঙ্গিবাদ দমনে শেখ হাসিনার সরকার দেশে বিদেশে প্রশংসিত হয়।

গত বছরের ২৩ নভেম্বর এ টেকনাফ সাবরাং এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় চারটি ট্যাংক বিধ্বংসী তাজা ৪০ মিলিমিটার রকেট হিট ও চারটি ফিন অ্যাসেম্বলি উদ্ধার করেছে র‌্যাব ১৫। কক্সবাজার র‌্যাব ১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৩০ মিনিটে সিপিএসসি ক্যাম্পের একটি দল সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর পাড়া মাঝের পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারটি ট্যাংক বিধ্বংসী অবিস্ফোরিত সতেজ ৪০ মিমি রকেট হিট এবং চারটি ফিন অ্যাসেম্বলি সহ পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া অত্যাধুনিক অস্ত্র দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি বলে ধারণা করা হয়।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর জঙ্গিদের প্রকাশ্য মহড়া, কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়া, অস্ত্র লুট আবারও জনমনে আতঙ্ক তৈরি করেছে। এ বিষয়ে জঙ্গি দমনে কাজ করা সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা পরিচয় না প্রকাশের শর্তে ‘ট্রু গেজেট’র প্রতিবেদককে বলেন,

“সিটিটিসি গঠনের পর থেকে জঙ্গি দমনে আমাদের উল্লেখযোগ্য সফলতা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এ বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে উৎসাহ বা নির্দেশনা না থাকায় প্রকাশ্যে জঙ্গিদের মহড়া, কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া, লুট হওয়া অস্ত্র তাদের দখলে গেলেও আমরা তেমন কিছুই করতে পারছি না। বরং পুলিশের এই বিশেষ ইউনিট অলস সময় কাটাচ্ছে। “

শেখ হাসিনার সরকারের সময় জঙ্গি নাটক করা হতো বলে মনে করে বর্তমান সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সহ জামাত নেতারা এবং আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। এসব কারণে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থান কিংবা দৃশ্যমান একশন ও চোখে পড়ছে না বলে মনে করে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

আনসার আল ইসলামের প্রশিক্ষক, একাধিক জঙ্গি হামলায় মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামী, সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর জিয়া সাতটি মামলা এবং জঙ্গির খাতা থেকে নাম কাটাতে আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামি।সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত হন মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। পুলিশের খাতায় তিনি একজন মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি। কখনও আনসার উল্লাহ (জেএমবি), কখনো-বা আইএস ও আল কায়েদার সদস্য হিসেবে দেখানো হয়েছে তাকে। জিয়াকে ধরতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল শেখ হাসিনার সময়। এ ছাড়া ২০২১ সালে লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া এবং আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনানের তথ্য পেতে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক টুইটে পুরস্কারের এ ঘোষণা দেয়া হয়। কতোটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলে একজন মৃত্যু দন্ড প্রাপ্ত জঙ্গি নেতা সরকারের কাছে এমন আবদার করতে পারে তা অবাক করার মতো বিষয়ও বটে! সূত্রঃ  ইত্তেফাক

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ৫ আগস্টের পর দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পুলিশের দুর্বল ভূমিকা এবং সরকারের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা—এই তিনটি কারণ জঙ্গি সংগঠনগুলোর সক্রিয় হয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করেছে। তারা প্রকাশ্যে ও গোপনে কর্মী সংগ্রহ করে সংগঠিত হচ্ছে।এ ছাড়া, জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত জঙ্গি নেতারা কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং তাদের হাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ রয়েছে। পাশাপাশি, সীমান্তের চোরাইপথেও আধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম তাদের হাতে এসেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, খুব শিগগিরই তারা বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে কিংবা মুক্তচিন্তার প্রগতিশীল মানুষদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে।অন্যদিকে, সরকার “ডেভিল হান্ট” নামক বিশেষ অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের আটক করছে, অথচ জঙ্গিরা কারাগারের বাইরে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, কারাগার থেকে জঙ্গি পালিয়ে যাওয়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র, গোলাবারুদ লুট, জঙ্গি নেতাদের জামিনে মুক্ত হওয়া, প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন গুলোর মহড়া, প্রচারণা, বিভিন্ন কর্মসূচিতে জঙ্গি সংগঠন আইএসের পতাকা উড়ানো এবং মুক্ত বুদ্ধি ও মুক্ত চিন্তার মানুষদের উপর হামলা, হেনস্থা কিংবা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পন্ড করা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এসব কিছুর পিছনে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সরকার থেকেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো কর্মকান্ড চোখে পড়েনি। এমতাবস্থায় শীঘ্রই বড় ধরনের ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা।

Share This Article
সংবাদকর্মী
error: Content is protected !!