ক্ষমতার লোভে সার্বভৌমত্বের বলিঃ মানবিক করিডরের আড়ালে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংকট।

সহায়তার নামে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্র হাতে টহল দিতে দেখা যেতে পারে এখানে। কিংবা, এই করিডোরই হয়ে উঠতে পারে সামরিক ঘাঁটি করার বাহানা বা প্রথম ধাপ। তারপর, একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র, যেমনটি বলেছিলেন শেখ হাসিনা, প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে আমারই দেশের পাহাড় আর উপত্যকা ঘেরা অঞ্চলটিতে। ভাবুন তো, ক্ষমতার লোভ কতটা বেশি হলে একটা জাতি আর জাতির সার্বভৌমত্ব নিয়ে বাজি ধরা যায়!

লিবারেল মাংকি
4 Min Read

৫ বছর ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘মানবিক করিডর’-এর নামে দেশের সার্বভৌমত্ব অবশেষে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে তুলে দিতে যাচ্ছেন। মিমস্ আর রীলস্ দেখা তরুণদের কাছে এর ভয়াবহ পরিণতি সম্ভবত এখনো বোধগম্য হচ্ছে না। গত ২৩ মে, ২০২৪ তারিখে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি করেছিলেন যে তিনি কোন এক সাদা চামড়ার লোকের কাছে থেকে বঙ্গোপসাগরে বিমান ঘাঁটি নির্মাণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম ও আরাকান সীমান্ত এলাকায় একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনে সহায়তা করার বিনিময়ে নির্বিঘ্নে ক্ষমতায় থাকার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু, এই প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়ে তিনি বলেছিলেন,

“আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারো হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাই না। জনগণ চাইলে ক্ষমতায় আসব, না চাইলে আসব না।”

দেশপ্রেমে বলীয়ান শেখ হাসিনার এমন জেদি, সাহসী ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্পষ্ট জবাব সেদিন অনেকের কাছেই ‘রাজনৈতিক নাটক’ বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু, সেই নাটকের দৃশ্যগুলো আজ যেন একেরপর এক বাস্তবায়িত হচ্ছে চোখের সামনে।

মেটিকুলাস প্ল্যানে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন নবার সিরাজুদ্দৌলা (পড়ুন শেখ হাসিনা) এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন মীর জাফর আলী খান (পড়ুন ড. মুহাম্মদ ইউনূস)। চোখের সামনে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব চলে যাচ্ছে ঔপনিবেশিক শক্তির হাতে (পড়ুন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতে), কিন্তু দেশের জনগণ নীরব। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি Nicole Ann Chulick এবং Andrew R Herrup গত ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ থেকে ১৮ এপ্রিল, ২০২৫ পর্যন্ত ভ্রমণ করে গেছেন। এর আগে, মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি প্যাসিফিকের ডেপুটি ডেপুটি কমান্ডিং অফিসার Lt. Gen. Joel B. Vowell বাংলাদেশে ভ্রমণ করে গেছেন। এছাড়াও, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে, যুক্তরাষ্ট্রের উঁচু পর্যায়ের একদল সরকারি কর্মকর্তা বাংলাদেশে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ব্রেন্ট নেইমান, ডোনাল্ড লু, অঞ্জলি কৌর এবং ব্রেন্ডন লিঞ্চ।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ১৩ মার্চ ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশে চার দিনের সফরে এসেছিলেন। প্রত্যেকটি সফরে মায়ানমার ইস্যুটি গুরুত্বসহ আলোচনা করা হয়েছিল। মায়ানমার যুদ্ধে বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক পরাশক্তির স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছে চীন, ভারত, রাশিয়া ও আমেরিকার মতো দেশগুলো। চীন আরাকান আর্মির সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে বলে অভিযোগ থাকলেও প্রকাশ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তারা জান্তা সরকারের প্রতি তাদের সমর্থনের কথা ব্যক্ত করেছে এবং জান্তা সরকারের প্রধান সমর্থক হয়ে উঠেছে। 

রাশিয়াও জান্তা সরকারের প্রতি সমর্থন দিচ্ছে। জান্তা সরকারের অস্ত্রের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে রাশিয়া। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আরাকান আর্মির বিজয় নিশ্চিত করতে সামরিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। এজন্য তাদের একটি চ্যানেল প্রয়োজন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্ভবত ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার বদলে সেই সুযোগ যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদান করতে রাজি হয়েছে। অর্থাৎ, অবৈধ ইউনূস সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়ে রাখবে এবং এর বিনিময়ে ইউনূস সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ভূমি এবং সেনাবাহিনী ব্যবহার করে সামরিক অস্ত্র এবং প্রযুক্তি আরাকান আর্মির কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। 

দেশ এবং দেশের সেনাবাহিনীর জন্য এটি যেমন লজ্জাজনক, তেমনি ভয়ঙ্কর। আরাকান আর্মির বিজয় নিশ্চিত হলে আমেরিকার মধ্যস্ততায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে, বোনাস হিসেবে এমন আশ্বাসও সম্ভবত ইউনূস পেয়েছেন। এজন্যই তিনি এত জোর গলায় বলেছিলেন যে আগামী ঈদ রোহিঙ্গারা নিজেদের ভূমিতে যেয়ে করবে। অবৈধ ইউনূস সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে চীন, রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। আরাকান আর্মি করিডোরের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা মায়ানমারের জান্তা সরকার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দিতে পারে। এই করিডোর হয়ে উঠতে পারে মাদক ও মানব পাচারের নিরাপদ চ্যানেল। 

সহায়তার নামে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্র হাতে টহল দিতে দেখা যেতে পারে এখানে। কিংবা, এই করিডোরই হয়ে উঠতে পারে সামরিক ঘাঁটি করার বাহানা বা প্রথম ধাপ। তারপর, একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র, যেমনটি বলেছিলেন শেখ হাসিনা, প্রতিষ্ঠিত হয়ে যেতে পারে আমারই দেশের পাহাড় আর উপত্যকা ঘেরা অঞ্চলটিতে। ভাবুন তো, ক্ষমতার লোভ কতটা বেশি হলে একটা জাতি আর জাতির সার্বভৌমত্ব নিয়ে বাজি ধরা যায়!

Share This Article
মবের মুল্লুকে আমি নিজ পরিচয়ে লিখতে ভীত-সন্ত্রস্ত। ক্ষমা করবেন আমায়।
error: Content is protected !!