৫ আগস্টের হামলা, অস্ত্র লুট, সমন্বয়কদের বক্তব্য ও বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা একসঙ্গে ইঙ্গিত করে—এটি নিছক রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, বরং একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের সুপরিকল্পিত প্রয়াস। সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতারা যুদ্ধের হুমকি দিয়ে জাতিকে গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিতে চাইছেন। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে, এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনই কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
গত জুলাইয়ে সংঘটিত সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর কয়েকজন সমন্বয়কের বক্তব্যে সশস্ত্র অভ্যুত্থান এবং যুদ্ধের প্রস্তুতির চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমসহ একাধিক সমন্বয়ক বিভিন্ন সময়ে তাঁদের ‘যুদ্ধকালীন পরিকল্পনার’ ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অন্যদিকে আন্দোলনের সময় কিংবা পরবর্তীকালে সমন্বয়কদের মধ্যে অনেককেই বলতে শোনা গেছে “যুদ্ধ আসন্ন।” এমনকি কেউ কেউ উপদেষ্টা হওয়ার পরও দেশের ভেতরে ‘যুদ্ধ নামানো’র হুমকি দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে কয়েকজন সমন্বয়কের বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে।,এছাড়া ৫ আগস্ট ৪৫০ টি থানা থেকে খোয়া যাওয়া ১৪০০ অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি।৫ আগস্টের হামলা, থানা আগ্নিসংযোগ অস্ত্র লুট, সমন্বয়কদের বক্তব্য ও বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা একসঙ্গে ইঙ্গিত করে—এটি নিছক রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, বরং একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থানের সুপরিকল্পিত প্রয়াস। সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতারা যুদ্ধের হুমকি দিয়ে জাতিকে গৃহযুদ্ধের মুখে ঠেলে দিতে চাইছেন।
দেশের ইউনূসের প্রশাসনের নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে কিংবা রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলেই এনসিপির নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে ছাত্র উপদেষ্টারা যুদ্ধের হুমকি দিতে থাকেন। ট্রু গেজেট-এর অনুসন্ধানে তাদের ৫ আগস্ট পরবর্তী দেওয়া বিভিন্ন সময়কার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সমন্বয়কদের যুদ্ধের ঘোষণা
জুলাই ১, ২০২৫ সালে বাসসে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম বলেন,
‘৪ তারিখেই আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম যে প্রয়োজনে অস্ত্রও তুলে নিতে পারি।
সরকার পতন আন্দোলনের এ মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ৪ তারিখ রাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করছিলাম। ঢাকার কতগুলো পয়েন্ট থেকে আন্দোলনকারীরা আসবে। গণভবন কীভাবে ঘেরাও হবে। বা এই সরকারের পতনের পর আমরা কী করবো। ৩ আগস্টের পর থেকেই এ আলোচনাগুলো শুরু হয়ে যায়। ড. ইউনূসের সাথে যোগাযোগ হয়। বিভিন্ন লোকজনের সাথে আলোচনা হয়। সরকারের রূপরেখা কেমন হতে পারে। কে হতে পারে সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অন্য উপদেষ্টারা কারা হবেন এসব বিষয় নিয়ে আমরা পুরো ব্যস্ত ছিলাম। ৩ আগস্ট থেকে আমাদের মধ্যে এ আত্মবিশ্বাস চলে এসেছিল যে সরকারের পতন হবে। কবে হবে, কীভাবে হবে তা হয়তো নিশ্চিত ছিলাম না।’
২১ শে মার্চ এক সাক্ষাৎকারে ইউনূসের উপদেষ্টা আসিফ দাবি করেন
‘সশস্ত্র অভ্যুত্থানের প্রস্তুতি ছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’
ঠিক একই ধরণের দাবি আসিফের সহযোগী আদিব দাবি করেন ৭ জুলাই ২০২৫ এ,
জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলে, সশস্ত্র প্রতিরোধ করা হতো :
জুলাই আন্দোলন নিয়ে এখনো বলা হয়নি কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি হচ্ছে ১৬ জুলাই ও ৫ আগস্ট দুপুরের সময়। প্রথমে ৫ আগস্টের কথা বলি। দুপুর ১২টার দিকে আমাকে ফোন করলো বর্তমান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। ফোন করে বললো ভাই সেনাবাহিনী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করতে পারে বিপরীতে আমরা বিপ্লবী সরকার ঘোষণা করতে চাই। আপনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের নিয়ে আসেন, আমরা চানখারপুল আছি। এখানে উল্লেখ্য ২ আগস্ট আসিফ মাহমুদের সাথে রাতে অনলাইনে আমার কথা হয়েছিল, হাসিনার বিদায় হলে সংসদ ভবন বা গণভবন জনতা দখল করলে আমরা বিপ্লবী সরকার করবো, এর নাম হবে ‘বিপ্লবী জাতীয় সরকার’ (রেভ্যুলেশনারী ন্যাশনাল গভমেন্ট)।
এ আন্দোলোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মুখ মাহফুজ আলম ও একাধিকবার যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন প্রকাশ্যে।।
১৮ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোষ্টে যুদ্ধের ঘোষণা দেন। পোস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, “গৃহযুদ্ধের পূর্ববর্তী মুহূর্তে একটা ‘সামাল দেওয়া’ প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, যা এখনো চলমান। কিন্তু এ যুদ্ধ তো হবেই কোনো না কোনো ফরমেটে।
এছাড়া মাহফূজ আলম একাধিক বার যুদ্ধের ঘোষণা দেন বিভিন্ন সময়ে ,
২০২৫ এর ,১১ মার্চ তিনি ঘোষণা দেন দেশে এখন ‘যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে’ মন্তব্য করে ‘ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
১২ নভেম্বর ২০২৪ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ ও যুদ্ধের স্ট্যাটাস দেন
’প্রোফাইল পিকচার বদল করে করে ক্যাপশনে হাসনাত লেখেন,
‘সাঈদ ওয়াসিম মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ। ১৩৪ শে জুলাই, ২০২৪।’
১৬ জুলাই এনসিপি নেতা নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারি
গোপালগঞ্জে ভবিষ্যত বাংলাদেশে যুদ্ধ শুরু করার হুশিয়ারি দেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—সমন্বয়করা যদি সত্যিই যুদ্ধের পথে যান, তবে তারা অস্ত্র পাবেন কোথা থেকে? কীভাবে নিচ্ছেন প্রস্তুতি? এবং জুলাইয়ে সরকার পতনের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো এখন কোথায় কিংবা কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে?
৫ আগস্টের পরপরই দেশের অন্তত ৪৫০টি থানায় হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে অস্ত্রশস্ত্র লুটের ঘটনাও ছিল উল্লেখযোগ্য। এই বাস্তবতা সামনে রেখে সমন্বয়ক কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা যেভাবে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে আসছেন, সেটি আর কল্পনাপ্রসূত বলে মনে হয় না।
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে পাঠকদের ফিরে যেতে হবে ৫ আগস্টের সেই অস্থির সময়ে।
৪৫০টি থানায় হামলা ও লুটপাটঃ
দেশের সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায়ঃ
যুগান্তর এক প্রতিবেদনে জানায় গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন এলাকার বহু থানায় নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে। ওই সময় সারা দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে অন্তত ৪৫০টি ‘আক্রান্ত’ হয়েছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।
কালবেলায় প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায় পুলিশের তথ্যানুযায়ী,’ এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি উদ্ধার হয়নি ১ হাজার ৮৮৫টি অস্ত্র।
“৫ আগস্টের পর দেশে ৫ হাজার ৮১৮টি অস্ত্র বেহাত হয়। এর মধ্যে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৩ হাজার ৯৩৩টি।”
উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে:
চায়না রাইফেল: ২৯৬টি
বিডি রাইফেল: ৮টি
চায়না এসএমজি: ৬০টি
এলএমজি: ১১টি
৯ বোর পিস্তল: ৬৫৩টি
শটগান (১২ বোর): ৬৫৩টি
সিগন্যাল পিস্তল: ২টি
গুলি: ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪০৫টি
টিয়ার শেল, গ্রেনেড, স্টান গ্রেনেডসহ আরও বহু সামগ্রী
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, গণভবন থেকে এসএসএফের ৩২টি স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র বেহাত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে স্নাইপার রাইফেল, অ্যান্টি-ড্রোন গান, রেডিও কমিউনিকেশন ডিভাইস।
চ্যানেল ২৪ ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়
হদিস মেলেনি থানা থেকে লুট হওয়া ১৪শ’ অস্ত্রের; সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই পুলিশের কাছে, গণভবন থেকে খোয়া যাওয়া অস্ত্রের কোন হদিস মেলেনি এখন পর্যন্ত।
২২ মার্চ ২০২৫ এ জাগো নিউজ এক সংবাদ প্রকাশ করে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র বিক্রি: পুলিশ কনস্টেবলসহ ৬ জন গ্রেফতার,গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন চট্টগ্রামে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কনস্টেবল মো. রিয়াদ এবং তার ৫ সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) নগরীর পতেঙ্গা থানার কাঠগড় ও বাকলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এছাড়া ২২ ফেব্রুয়ারি,২০২৫ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে প্রথম আলো জানায়
লুণ্ঠিত অস্ত্র–গুলি অপরাধীদের হাতে। পুলিশের লুট হওয়া ১,৩৯২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ লাখ ৬০ হাজার গোলাবারুদ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর যৌথ অভিযান শুরু হয়। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এ অভিযানে গত ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৩৮টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। তবে এখনো ১ হাজার ৩৯২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২ লাখ ৬০ হাজার ৫৩১টি গোলাবারুদ উদ্ধার হয়নি।জেল থেকে পালানো ৭০০ আসামিকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাঁদের মধ্যে ১০০ জন নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করা হচ্ছে।
সমন্বয়কদের থেকে অস্ত্র উদ্ধার
৭ জুলাই ২০২৫ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে জানা যায় কুমিল্লার সমন্বয়ক শিমুলের বাড়ি থেকে দেশি বিদেশী অস্ত্র, গুলি উদ্ধার করছে সেনাবাহিনী।
১৬ জুন,২০২৫ এহমেহেরপুরে জামায়াতের নেতার বাসায় অভিযান চালিয়ে জুলাই সন্ত্রাসী আন্দোলনে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তলসহ স্থানীয় সমন্বয়কের পিতা জামায়াত নেতা আটক। অভিযানের খবর পেয়ে সমন্বয়ক পালিয়ে যায়।।রপুরে জামায়াতের নেতার বাসায় অভিযান চালিয়ে জুলাই সন্ত্রাসী আন্দোলনে ব্যবহৃত বিদেশি পিস্তলসহ স্থানীয় সমন্বয়কের পিতা জামায়াত নেতা আটক। অভিযানের খবর পেয়ে সমন্বয়ক পালিয়ে যায়।
মাদারীপুরে এনসিপি নেতা তুষার সব্যসাচী এর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিদেশী পিস্তল, কাটা রাইফেল, এয়ারগানসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। এ সময় তিন নারীসহ ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
অস্ত্রসহ আটক এনসিপি নেতা তুষার সব্যসাচীর পরিবারের সদস্যরা
মাদারীপুর সেনা ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয়ে সেনা সদস্যরা ঘুনসী এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে একই বংশের সাতটি বাড়িতে সেনা সদস্যরা তল্লাশি চালায়। এ সময় চারটি বাড়ি থেকে একটি ৭.৬৫ মিলিমিটার বিদেশী পিস্তল, একটি ৭.৬৫ মিলিমিটার পিস্তরের ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড ৭.৬৫ মিলিমিটার পিস্তলের গুলি, একটি এয়ারগান, ১২০ রাউন্ড এয়ারগানের গুলি, একটি কাটা রাইফেল, বেজবল একটি, স্টিলের চাকু দু’টি, চাইনিজ কুড়াল দু’টি, রামদা সাতটি, বল্লম একটি, টেঁটা ১৮টি, বিদেশী টর্চ লাইট একটি, পাঁচটি মোবাইল ফোন, একটি ট্যাব, একটি এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।
বিদেশী অস্ত্র উদ্ধার
১৭ মে ২০২৫ সালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দৈনিক সংগ্রাম জানায়
চট্টগ্রামে পাঁচদিনের ব্যবধানে সাতটি বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ৩ থেকে ৭ মে’র মধ্যে এসব অস্ত্র উদ্ধার হয়। এসব অস্ত্রের মধ্যে কোনোটি ইউএসএ’র তৈরি, কোনোটি পাকিস্তানের তৈরি, কোনোটি ব্রাজিলের তৈরি আবার কোনোটি ইংল্যান্ডের তৈরি। এরমধ্যে কোনোটি উদ্ধার হয়েছে হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতারের সময়, কোনোটি উদ্ধার হয়েছে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় আবার কোনো উদ্ধার হয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে বিদেশি অস্ত্র ঢুকে বাংলাদেশে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিদেশি অবৈধ অস্ত্র চালানের বড় সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। ওইসব সিন্ডিকেটই বাংলাদেশে বিদেশি অস্ত্র নিয়ে আসে। অস্ত্র ঢুকছে সাগর পথে মিয়ানমার থেকে। চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এসব অস্ত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া কক্সবাজারে রয়েছে অস্ত্র চোরাালানের বড় একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিদেশি অস্ত্র রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শুরু করে ছড়িয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে। যার ফলে অপরাধীদের হাতে হাতে এখন বিদেশি অস্ত্র।
গত নভেম্বরে বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায় টেকনাফ সাবরাং এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় চারটি ট্যাংক বিধ্বংসী তাজা ৪০ মিলিমিটার রকেট হিট ও চারটি ফিন অ্যাসেম্বলি উদ্ধার করেছে র্যাব ১৫।কক্সবাজার র্যাব ১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৩০ মিনিটে সিপিএসসি ক্যাম্পের একটি দল সাবরাং ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর পাড়া মাঝের পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারটি ট্যাংক বিধ্বংসী অবিস্ফোরিত সতেজ ৪০ মিমি রকেট হিট এবং চারটি ফিন অ্যাসেম্বলি সহ পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।”তিনি জানান, উদ্ধার হওয়া অত্যাধুনিক অস্ত্র দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি বলে ধারণা করা হয়। ১৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তান থেকে জাহাজ পৌঁছে। ২৩ নভেম্বর,২০২৪ এ কক্সবাজারে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অস্ত্র উদ্ধার! রহস্য কোথায়?
এনসিপি নেতাদের বারবার দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধের হুমকি দেওয়া, যুদ্ধ ঘোষণা , ৪৫০ টি থানা থেকে অস্ত্র লুট, সমন্বয়কদের বাড়িতে অস্ত্র উদ্ধার, সীমান্তে পাকিস্তানী অস্ত্র উদ্ধার সবকিছুই অজানা আশংকার জন্ম দেয়। বাংলাদেশকে পরিকল্পিতভাবে কি গৃহযুদ্ধ কিংবা যুদ্ধের মুখোমুখি করার সেই অপচেষ্টা কি অব্যাহত?
উপরে উত্থাপিত তথ্য ও বিশ্লেষণ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, সমন্বয়ক এবং এনসিপি নেতারা শুধুমাত্র কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি—বরং তারা দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত ও গৃহযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, এবং ৫ আগস্টের ঘটনার মাধ্যমে সেই পরিকল্পনার এক ভয়াবহ বাস্তব রূপ প্রকাশ পেয়েছে। একদিকে তাঁরা প্রকাশ্যে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, অন্যদিকে তাঁদের বাসা থেকে অস্ত্র উদ্ধার, দেশের ৪৫০টি থানায় হামলা ও অস্ত্র লুট এবং সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র প্রবেশ—এসব মিলিয়ে এটি আর বিচ্ছিন্ন কোনো রাজনৈতিক বিক্ষোভ নয়, বরং সুসংগঠিত এক সশস্ত্র পরিকল্পনারই অংশ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
এনসিপি নেতারা বারবার যেভাবে দেশের অভ্যন্তরে গৃহযুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন, তা শুধু রাজনৈতিক দায়িত্বহীনতা নয় বরং এটি সরাসরি জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি। প্রশ্ন ওঠে, জনগণের প্রতিনিধিত্বের দাবিতে এগিয়ে আসা কোনো ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র বা উপদেষ্টা কিভাবে দেশে গৃহযুদ্ধের পক্ষে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উক্তি দেন? দেশের অস্ত্রাগার লুট, নিরাপত্তা বাহিনীর অস্ত্র বেহাত এবং সীমান্ত দিয়ে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি এইসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হতে পারেন?
এই প্রেক্ষাপটে স্পষ্টভাবে বলা যায়, সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতারা যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে একটি পরিকল্পিত গৃহযুদ্ধের ছক আঁকছেন। দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের জন্য জনগণের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে জিম্মি করার এই অপচেষ্টা এখনই রুখতে না পারলে, বাংলাদেশকে এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হবে।
সুতরাং, রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং দেশের সচেতন জনগণের উচিত—এই সশস্ত্র ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে দ্রুত, কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।