ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বঙ্গবন্ধু হলের দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্য ‘মা ও শিশু’ বারংবার ভাঙচুর করছে ইসলামি ছাত্রশিবির, সবকিছু জেনেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অপারগ হল কর্তৃপক্ষ।

ট্রু গেজেটের অনুসন্ধানে জানা যায়, জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলের অভ্যন্তরে অবস্থিত ‘মা ও শিশু’ ভাস্কর্য কমপক্ষে সাতবার ভাঙা হয়েছে। হল কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকবার মেরামত করে দিলেও রাতের অন্ধকারে আবারও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ভাস্কর নভেরা আহমেদের এই দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্মকে। শেষতক প্রশাসন নিরুপায় হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে। এই প্রতিবেদন তৈরির দিনও ভাস্কর্যটি ভাঙা অবস্থাতেই পড়ে থাকতে দেখা যায় হলের আঙিনায়।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ৫ ই আগস্ট প্রথমবারের মতো ভাস্কর্যটিকে ভাঙা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর মাসে হল প্রশাসন ভাস্কর্যটি মেরামত করে উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করেন। কিন্তু দুদিনের মাথায় এটিকে আবারও রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলা হয়। হল কর্তৃপক্ষ পুনরায় মেরামত ও পুনঃস্থাপন করলেও প্রত্যেকবারই রাতের অন্ধকারে ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় আবারও সবার অভিযোগের তীর স্বাধীনতাবিরোধী ও ধর্মীয় উগ্রবাদী ছাত্রসংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবিরের দিকে।
এ ব্যাপারে হলের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহিনকে (ছন্দনাম) জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে মুখ খুলতে চাননি। পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে বলেন,
“সত্যি বলতে হলে সবার কাছে এটা ওপেন সিক্রেট শিবিরকর্মীরা ভেঙেছে। যেখানে হল প্রশাসন তাদের ভয়ে থাকে সে জায়গায় আমাদের কিছুই করার নেই। ফ্যাসিবাদের দোসর ট্যাগ খেয়ে আমরা বিপদে পড়তে চাইনা।”
অন্যদিকে অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান (ছন্দনাম) বলেন,
“ভাস্কর্যটা নিয়ে হলের অনেকেই অশ্লীলতার অভিযোগ তুললেও কেউই ভাঙতে যাবেনা। হলের ইসলামি রাজনীতির সাথে জড়িত ছাত্ররাই এটা করেছে, কিন্তু সমালোচনার ভয়ে প্রকাশ্যে আসে না”
এ ব্যাপারে আরও জানার জন্য হল প্রভোস্টের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং প্রতিবেদন না করতে অনুরোধ করেন। তিনি আরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে,
এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তিনি বিপদে পড়তে পারেন। তাছাড়া এর আগে তার বিরুদ্ধে মব হয়েছিল সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে শিবিরের পক্ষ থেকে। সেই ভয় তাকে এখনো তাড়া করে।

আমাদের টিম অনুসন্ধান করে ভাংচুরের ঘটনায় কয়েকজন অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছে। অনুসন্ধানে বারবার কয়েকটি নাম ঘুরেফিরে এসেছে যারা এই ঘটনার নেপথ্যে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্রশিবিরের হল কমিটির বর্তমান সভাপতি মোঃ মুসলিমুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ রিফাত হোসাইন ওরফে কামরুল হাসান রিফাত এই ভাঙচুরের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের মধ্যে মুসলিম ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী আর রিফাত দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং দুজনেই ঢাবি ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। এছাড়াও সম্প্রতি হলের নামফলক মুছে ফেলে নাম পরিবর্তন করার তৎপরতাও চালিয়েছে শিবিরের এই নেতাকর্মীরা। সেখানে হল শিবিরের সাবেক ক্যাডার এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী আতিক আশিককেও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হলের নামফলক ভাঙায় ও তদের সক্রিয় কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।


উল্লেখ্য যে, গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর সারা দেশের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আঘাত আসে। মুক্তবুদ্ধি ও প্রগতিশীল চর্চার এই প্রাণকেন্দ্রে ভাঙচুর করা হয় শত শত ভাস্কর্য, নষ্ট করা হয় বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন।