হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদন উদ্দেশ্য প্রণেদিত কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ, কিন্তু তারা কেন পরিপূর্ণ সত্যতা যাচাই না করেই এধরণের রিপোর্ট প্রকাশ করবে তা রহস্যজনকই বটে। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ইউনুসের প্রশাসন দ্বারা ,কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে মিথ্যা ভাষ্য প্রকাশিত হওায়ার পরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ইউনুসের প্রশাসন দ্বারা প্রভাবিত কিনা সে উদ্বেগ থেকে যায়!

Editor
4 Min Read

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনের সূত্রধরে গত ২৮ জানুয়ারি প্রথম আলোর প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, গুমের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা বা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জানতেন এবং কিছু ক্ষেত্রে হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ২৮ জানুয়ারি, মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ইলেইন পিয়ারসনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এই রিপোর্টের খবর দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়, কিন্তু বিপত্তি শুরু হয় তখন, যখন সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত, কাতার-ভিত্তি আল-জাজিরার সংবাদকর্মী জুলকারনাইন সামি ফেসবুকে স্ট্যাটাসে দাবী করেন যে, HRW এর প্রতিবেদনে উল্লেখিত সেনা কর্মকর্তার বয়ানটি মূলত সামি’র সূত্রে উদ্ধৃত হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে সামি দাবী করেনঃ

“হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে ওই কর্মকর্তার সাক্ষাতকারটি আমি প্রদান করি, কিন্তু ওই কর্মকর্তার অনুরোধের কারণে তাঁর নাম প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকছি। সাক্ষাতকারে তিনি আমাকে যা বলেছেন তা হুবহু উল্লেখ করছি। “ব্রিগেডিয়ার আজমি স্যার প্রায়ই শেখ হাসিনার কাছে তার মুক্তি দাবি করে বিশাল বিশাল সব চিঠি লিখতেন, প্রতিটি চিঠি আমি প্রধানমন্ত্রীকে দেই। একদিন তাকে (হাসিনা) বললাম, স্যার উনাকে (বি.জে.আজমি) ছেড়ে দেই, এটা ঠিক হচ্ছেনা। উত্তরে হাসিনা আমাকে বলেন; রাখতে না পারলে ফালায়ে দাও (হত্যার প্রতি ইঙ্গিত করে)। একই সাথে তিনি হাত দিয়ে বিশেষ ভঙ্গি করেন (কক্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যে)।”

কিন্তু একই পোষ্টের কমেন্ট বক্সে  যুদ্ধাপরাধি গোলাম আজম পুত্র আজমি দাবি করেন “…

অফিসার মিথ্যা কথা বলেছে। আমি প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কাউকে কোন চিঠি দেই নি বা মুক্তির জন্য কোন আবেদন করিনি।” 

পরবর্তীতে আজমি ফেসবুক পোষ্ট দিয়ে বলেন প্রাক্তন (বর্তমানে পলাতক) প্রধানমন্ত্রী ‘আমাকে হত্যা করার নির্দেশ/ অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে যে রিপোর্টটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে যে, “আমি মুক্তি চেয়ে বারবার আবেদন করেছিলাম’। বক্তব্যটি সর্বৈব মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আট বছরের বন্দীজীবনে আমি কখনো প্রধানমন্ত্রীর নিকট কোনো ধরণের কোনো আবেদন করিনি। বরং, ২৩শে মে ২০২১ তারিখে সেখানকার এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন যে , আমি দেশে থাকবোনা, রাজনীতি করবোনা, নিজের পরিবার নিয়ে বিদেশ চলে যাবো’ এই মর্মে একটি মুচলেকা দিতে। আমি সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছি এবং বলেছি যে, “আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমি রাজনীতি করবো কি করবোনা, দেশে থাকবো কি থাকবোনা সেটা আমার সিদ্ধান্ত। আমি মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেতে চাই না”। সেই কর্মকর্তা কয়েকবার বললেও আমি আমার বক্তব্যে অটল থাকি। আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার এ ধরণের নির্লজ্জ মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই। ভবিষ্যতে এ ধরণের মিথ্যাচার না করার  জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

এ ব্যাপারে তিনি আলাদা একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে জানান তিনি গণমাধ্যমে  ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায়  বিবৃতি পাঠিয়েছেন সামির দেওয়া স্টেটমেন্টের বিরুদ্ধে।

অর্থাৎ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের  প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট ভাষ্যের উপর লিখিত। এরকম ভূয়া স্টেটমেন্ট এর সত্যতা নিরুপুন করতে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে আমরা ট্রু গেজেট থেকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাথে যোগাযোগ করি, প্রায় ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও তারা আমাদের মেইলের কোন উত্তর দেয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই রিপোর্ট বিষয়ে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেপুটি ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাংগুলির সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করি,যদিও আমরা তার কাছে পৌঁছাতে পারিনি। 

বিডি ডাইজেস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে এমন ভুলে ভরা, অতিরঞ্জিত একটি সূত্র (সোর্স) থেকে নাম পরিচয় প্রকাশ করতে না চাওয়া কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এইচআরডব্লিউ, সেটা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার তথ্যের সত্যতা ও প্রতিবেদনের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এই প্রতিবেদন উদ্দেশ্য প্রণেদিত কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ, কিন্তু তারা কেন পরিপূর্ণ সত্যতা যাচাই না করেই এধরণের রিপোর্ট প্রকাশ করবে তা রহস্যজনকই বটে। বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ইউনুসের প্রশাসন দ্বারা ,কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে মিথ্যা ভাষ্য প্রকাশিত হওায়ার পরে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও ইউনুসের প্রশাসন দ্বারা প্রভাবিত কিনা সে উদ্বেগ থেকে যায়!

Share This Article
error: Content is protected !!