শিবিরের গুপ্ত সংগঠন  স্টুডেন্ট সভারেন্টি 

student for sovereignty নামে এক সংগঠন আজকে স্ট্যাম্প দিয়ে আমি কে, তুমি কে, বাঙালি বাঙালি স্লোগান দিয়ে আদিবাসী দের পিটিয়ে মাথা ফাটায় ফেলছে। শিবিরের সভাপতি সাদিক কাইয়ুম, ফরহাদ পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের  প্রেসিডেন্ট ছিলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ সংগঠন এই  student for sovereignty প্ল্যাটফর্ম চালায়, ওদের পেজ থেকে এই প্ল্যাটফর্মের লাইভ হয়।

হায়দার আহমেদ
7 Min Read

নতুন পাঠ্যবইয়ে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি বাতিলের প্রতিবাদে ‘ সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা এনসিটিবি অভিমুখে বিক্ষোভ করতে গেলে তাদের উপর মতিঝিল মেট্রো স্টেশনের নিচে বর্বর হামলা করে ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ নামের একটি নামসর্বস্ব সংগঠন। এতে আহত হয় ২০ জনের অধিক শিক্ষার্থী। আহত হওয়া, বিক্ষোভে অংশ নেয়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী এবং প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা হামলার জন্য দায়ী করেছে ইসলামি ছাত্র শিবিরকে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত দুই নারী শিক্ষার্থী

১৫ জানুয়ারি দুপুরে এনসিটিবি কার্যালয়ের সামনে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পেছনের প্রচ্ছদে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংবলিত গ্রাফিতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে ‘আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা এবং বিভিন্ন প্রগতিশীল বাম ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা৷ বিক্ষোভে হামলা করে স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি নামের একটি নাম সর্বস্ব সংগঠন। সংগঠনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক দাবি করা হলেও হামলাকারীদের অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয় বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।  ‘স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি’ ঢাবির কোনও সংগঠন নয় বলে ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।  হামলায় ২০-২৫ বছরের যুবক থেকে ৪০-৫০ বছর বয়সী মানুষদেরও দেখা যায়। এ হামলায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রূপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ্যা সহ আহত হয় ২০ জন এবং পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশের সামনেই তাদের উপর হামলা করা হয়। যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের অনলাইনে লাইভ চলছিলো।

হামলার পর পরই ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহবায়ক আরমানুল হক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমকে এ হামলার জন্য ইসলামী ছাত্র শিবিরকে দায়ী করে বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেন,

“শিবির উরফে “Students for Sovereignty” NCTB অভিমূখে মিছিলে স্টাম্প নিয়ে এসে “আদিবাসী” দের মিছিলে হা ম লা করল।

আর স্লোগান দিচ্ছে তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি। 

আবার তারা ভাড়া করে মানুষও আনল।” 

পোস্ট লিংক: https://www.facebook.com/share/p/19r9kTJwiz

এছাড়া হামলার পর পর বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহ-সভাপতি ফারহা তাহসিন তার ফেসবুকে লিখেন,

” student for sovereignty নামে এক সংগঠন আজকে স্ট্যাম্প দিয়ে আমি কে, তুমি কে, বাঙালি বাঙালি স্লোগান দিয়ে আদিবাসী দের পিটিয়ে মাথা ফাটায় ফেলছে। শিবিরের সভাপতি সাদিক কাইয়ুম, ফরহাদ পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের  প্রেসিডেন্ট ছিলো। পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ সংগঠন এই  student for sovereignty প্ল্যাটফর্ম চালায়, ওদের পেজ থেকে এই প্ল্যাটফর্মের লাইভ হয়।

সন্ত্রাসবাদ কায়েম করতে দশটা নাম দিয়ে দশটা উইং খুলে বসছে।” 

ফেসবুক পোস্ট লিংক: https://www.facebook.com/share/p/18Cu8okJex/ 

আদিবাসি শিক্ষার্থীদের উপর হামলা স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি তথা শিবিরের ক্যাডারদের

এদিকে নামে ছাত্রদের সংগঠন হলেও সভরেন্টির মূল নেতা জিয়াউল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন গত ১৫ জানুয়ারির কর্মসূচিতে তাদের ‘সমর্থন’ দিতে আসা সমমনা অনেকেই ছিলেন ‘অছাত্র’।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “স্টুডেন্ট ফর সভরেন্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সংগঠন নয় এবং এর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ’ ও ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ’ নামের পার্বত্য বাঙালি ছাত্রদের দুটি সংগঠন সভরেন্টির কর্মসূচি প্রচারে ভূমিকা রাখায় এটিকে এ দুই সংগঠনের একই কাতারে রেখে এগুলোর ‘অ্যালাইন’ হিসেবে অভিহিত করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই একাধিক ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

পাহাড়ের ছাত্র সংগঠন দুটির বেশিরভাগ বিভিন্ন সময়ে সরকারি ‘সেটেলমেন্ট’র মাধ্যমে পার্বত্য এলাকায় বসত গড়া বাঙালিদের উত্তরপ্রজন্মের সদস্য।আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে আসা ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের’ সভাপতি ছিলেন। গত রোববার শিবিরের নবগঠিত ৪৬ সদস্যের কার্যকরী পরিষদে কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নবনির্বাচিত সভাপতি এস এম ফরহাদও ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের’ সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন। তাদের প্রথমজন খাগড়াছড়ির এবং দ্বিতীয়জন রাঙামাটির বাসিন্দা।এতে করে সবাই স্টুডেন্ট ফর সভারেন্টি কে শিবিরেরই একটি গুপ্ত সংগঠন বলছে৷ এছাড়া শিবির সভাপতি, সাদিক, কায়েম কিংবা ফরহাদরা এ সংগঠনকে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন বলেও  অনুসন্ধানে জানা যায়।

এসব বিষয়ে শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি গৌতম শীল বলেন, ছাত্র শিবিরকে ইঙ্গিত করে বলেন,“সাম্প্রতিকালে একটি গুপ্ত এবং সন্ত্রাসী সংগঠন বিভিন্ন ব্যানারে, নামে-বেনামে, ছদ্মবেশ ধারণ করে এদেশের গণতন্ত্রকামী, মুক্তিকামী অসাম্প্রদায়িক চেতনার সাধারণ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় হামলা করা হয়েছে সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর।”

এদিকে সরকার সমর্থিত রাজনৈতিক গোষ্ঠী, জাতীয় নাগরিক কমিটির ধানমন্ডি শাখার সদ্য ‘বহিষ্কৃত’ নেতা শাহাদাৎ ফরাজী সাকিব পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তার বাড়িও রাঙামাটির লংগদু উপজেলায়। গত মঙ্গলবার তিনি তার ফেইসবুকে স্টুডেন্টস ফর সভরেন্টির এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি নিয়ে পোস্ট দিয়ে সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওইদিনের হামলায় আহত অনেকে জানিয়েছেন, হামলার সময় সাকিব ঘটনাস্থলে ছিলেন। বুধবারের ঘটনায় সাকিবের সম্পৃক্ততা সামনে আসার পর তাকে জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।সূত্রঃ বিডিনিউজ ২৪

হামলার পর এক হামলাকারী মিডিয়ায় দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ” প্রশাসন সহ তারা পাহাড়িদের প্রতিরোধ করতে চেয়েছেন।” তার এ বক্তব্যের সত্যতা মেলে সেদিন পুলিশের ভূমিকা দেখে। পুলিশ সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা হামলা ঠেকাতে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পরবর্তীতে হামলার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, জল কামান ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর এরিয়ায় প্রবেশ করে শিক্ষার্থী, সাংবাদিকদের উপর এ হামলা চালায়৷ যেখানে বেশ কয়েকজন আহত হয়। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন এক প্রতিবাদ লিপির মাধ্যমে। 

হামলার পর পর দেশব্যাপী তুমুল সমালোচনা এবং ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।  পাহাড়ি ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় আটক দুজনসহ অজ্ঞাতনামা প্রায় ৩০০ জনকে আসামি করে ইতোমধ্যে মামলা করা হয়েছে। হামলার পর সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমনে সরকার দুজনকে গ্রেফতার করলেও বাকি হামলাকারীদের গ্রেফতারে তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না। নতুন ইস্যু তৈরি করে ইতোমধ্যে এ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। সমালোচনা হয় এক হামলাকারী দুপুরে হামলা করে রাতে রাঙামাটিতে যেয়ে বক্তব্য প্রদানের ভিডিওকে কেন্দ্র করেও। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাহলে করছে কী, বিশেষ কোনো মহলের ইঙ্গিতে প্রশাসন হামলাকারীদের উপর নির্বিকার কিনা। 

এ হামলার পর ক্যাম্পাসগুলোতে এবং সারাদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিবিরের গুপ্ত রাজনীতি এবং বেনামি, নাম সর্বস্ব সংগঠনের ব্যানারে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হামলার নিন্দা জানানো হয়। অনেকেই তাদের গুপ্ত রাজনীতি ছেড়ে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফেরার আহবান জানিয়েছে।

Share This Article
সংবাদকর্মী
error: Content is protected !!