ছাত্রশিবিরের রগ সন্ত্রাস। ‘রগ কাটা’ বর্বরতার আদ্যোপান্ত……

ট্রু গেজেটের অনুসন্ধানে ছাত্রশিবির কর্তৃক শতাধিক হত্যা এবং রগ কাটা নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে,যা বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্র শিবিরকে পরিণত করেছে। ছাত্রশিবিরের রগ কাটা বর্বরতা থেকে ছাত্রদল,ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন সহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাদ যায়নি। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ছাত্র শিবিরের রগ সন্ত্রাসের শিকার।.সেই ১৯৮১ সাল থেকে ২০২৫ এই বর্বরতা আজ ও চলমান।

Truegazette
37 Min Read

ইসলামি ছাত্র শিবির আর রগ কাটা যেন একে অপরের পরিপূরক শব্দ৷ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে এবং এর বাইরে বিরোধী মতের উপর চোরাগোপ্তা হামলা, রগ কেটে পঙ্গু বানিয়ে দেয়া, অস্ত্রের মাধ্যমে খুন, অন্য সংগঠনে অনুপ্রবেশ এবং জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিজেদের পরিচিত করেছে শিবির।

শিবির বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন। ১৯৭১ এর পূর্বে জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংস্থার নাম ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। পাকিস্তান আমলে এই দলটির পূর্ব নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্র সংঘ (ইসলামী জমিয়তে-ই-তালাবা পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তান শাখা)  মুসলিম ছাত্র ব্যতীত কেউ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য হতে পারেনা। ছাত্র সংঘের নেতা-কর্মীদের দিয়ে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে গঠিত হয় আলবদর, আল শামস নামে আধা সামরিক বাহিনী। যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যুদে অবতীর্ণ হয়। ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ী ছিলো এ সংগঠনটি। যার ফলে দেশ স্বাধীনের পর দল হিসেবে নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন, ইসলামি ছাত্র সংঘ।

১৯৭২ সালের সংবিধানের ৩৮ ধারা অনুযায়ী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। জামায়াতে ইসলামীসহ এর ছাত্রসংগঠনের রাজনীতির মূল উপজীব্য যেহেতু ধর্ম, সেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে জামায়াতসহ এর ছাত্রসংগঠনের সাংগঠনিক অস্তিত্ব দৃশ্যত বিলীন হয়ে যায়।

পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে ঘাতকদের হাতে শহিদ হওয়ার পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া জেনারেল জিয়ার শাসনামলে জামায়াত রাজনীতি তে ফিরে আসে। ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৭ সালে ইসলামি ছাত্র সংঘ নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্র শিবির হিসেবে রাজনীতি শুরু করে। ৭১ এর কলঙ্কজনক অধ্যায়ের কারণে তারা সারাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে প্রতিরোধ বা বয়কটের মুখে পড়ে। ক্যাম্পাস দখল করতে তারা একপর্যায়ে হয়ে ওঠে ভয়ংকর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে। রগ কেটে হত্যা করা, গুলি চালিয়ে হত্যা করা, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা, বোমা হামলার মতো ঘৃণ্য কাজ তারা করে প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের উপর।

সম্প্রতি  ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সেক্রেটারি সংবাদমাধ্যমে বলেন,

“শিবির রগকাটে তা গুগল করলেও গুগলে পাওয়া যাবেনা।”

আমাদের ট্রু গেজেট’ টিম এ বক্তব্য দেখার পর অনুসন্ধানে নামে। গুগলে, বিভিন্ন মাধ্যমে অনুসন্ধান করে আমরা শিবিরের বর্বর রগ কাটার ইতিহাস উন্মোচন করতে সক্ষম হই। যদিও  শিবির রগ কাটার জন্য কুখ্যাত ,কিন্তু নতুন প্রজন্ম তথা জেনজি তাদের বর্বরতা সমন্ধে ততোটাও অবগত নয় । আমরা শিবিরের রগ কাটার কুকীর্তি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পেয়েছি।

চলুন নজর দেয়া যাক শিবিরের বর্বর রগ কাটার কুখ্যাত ইতিহাসের দিকে:-

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুতেই যেন কমছে না রগ কাটার রাজনীতি। গত পাঁচ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকার অন্তত ১৫ নেতাকর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটেছে ছাত্রশিবির। সর্বশেষ মঙ্গলবার দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মীর রগ কেটে দেয়া হয়। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মী মাসুদের দুই পায়ের গোড়ালি থেকে পাতা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে তারা। এক দিনে একদিনে চার জনের রগ কাটার মতো বর্বরতা আছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুত্রঃ প্রিয় 

কুপিয়ে,রগ কেটে,হাত পা ভেঙ্গে ফারুক... - কী ভাবছে বাংলাদেশ? | Facebook

শুধু মাত্র রাজশাহীতে ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল নাগাদ ৮ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীর রগ কাঁটে শিবির।  প্রথম আলোর  ভাষ্যমতে মাঝে তাদের রগ কাটা বন্ধ থাকলেও ২০১০ সাল থেকে আবার শুরু হয়। ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃশংস এক হামলা চালান শিবিরের কর্মীরা। তাঁরা ছাত্রলীগের নেতা ফারুক হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ শাহ্ মখদুম হলসংলগ্ন ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে দেন। ওই রাতে ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর রহমান বাদশা, ফিরোজ মাহমুদ, আরিফুজ্জামান ও শহিদুল ইসলামের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির।

এই রিপোর্টে প্রথম আলো আরো বলছে  বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা সাইফুর রহমান এখনো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শরীরের কাটা দাগগুলো দেখে এখনো আঁতকে উঠি। ব্যথার যন্ত্রণায় রাতে ঘুমাতে পারি না। শিবিরের নৃশংসতা কেড়ে নিয়েছে আমার সব স্বপ্ন। পড়াশোনা শেষ করে কোনো চাকরিও জোগাড় করতে পারিনি। বৃদ্ধ বাবার পেনশনের টাকায় এখনো চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।’

গত বছরের ২১ নভেম্বর চোরাগোপ্তা হামলার শিকার হন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সহসভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিম। তাকিমকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার পর তাঁর এক পা ও এক হাতের রগ কেটে দেন দুর্বৃত্তরা। এ হামলার জন্য ছাত্রশিবিরকেই দায়ী করে ছাত্রলীগ। তাকিম জানান, তিনি এখনো স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না। হাঁটতে গেলে ব্যথা করে বাঁ পা। আর শরীরের বিভিন্ন স্থানের ক্ষতগুলো যন্ত্রণা দেয়।

চলতি বছরের ১৭ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালায় শিবির। তারা শহিদুল ইসলামের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের সদস্য মাইনুল হোসেন ও যুবলীগের নেতা রুহুল আমিনকে কুপিয়ে জখম করা হয়। শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ডান পায়ের গোড়ালি থেকে নিচ পর্যন্ত কোনো অনুভূতি নেই। বাঁ পায়ে ৩৫টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। হাঁটতে গেলে পা ফুলে যায়, রাতে প্রচণ্ড ব্যথা করে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, আরেকবার অস্ত্রোপচার করা লাগবে।’ এরপর গত ১৪ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মেহেরচণ্ডী এলাকায় চোরাগোপ্তা হামলার শিকার হন রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান। হামলাকারীরা তাঁর বাঁ পা ও ডান হাতের রগ কেটে দেয়। পরবর্তী সময়ে হাবিবুরের ডান পায়ের হাঁটু পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়েছে। সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হাবিবুরের চলাফেরার ভরসা এখন ক্রাচ।

শিবির কর্মীদের হাতে নিহত জাসদ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আশির দশকে ঘটা এসব হত্যা ও নির্মম নির্যাতনের বিচার হয়নি কখনো | ছবি: সংগৃহীত

১৯৮২ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বর্বর আখ্যান পাওয়া যায় শিবিরের বর্বরতার , ভোরের কাগজ বলছে  রাজশাহীতে শিবির প্রথম নির্মম এবং বর্বর হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় ১৯৮৮ সালের ৩১ মে। ওইদিন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে শিবির ক্যাডাররা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি জামিল আকতার রতনকে চার হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। শত শত শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সামনে এমন নির্মম ঘটনার জন্ম দিয়ে স্বরূপে হাজির হয় ছাত্রশিবির। একের পর এক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে থাকে রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয়। তবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পরেও থেমে থাকেনি শিবিরের বর্বরতা। ১৯৮২ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত কেবল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রায় শতাধিক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। আর ২০১০ সাল পর্যন্ত শিবিরের বর্বরতায় ছাত্রলীগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সংগঠনের ২৮ জন শিক্ষার্থী নিহত হয়। আহত হয় সহস্রাধিক মেধাবী। এ সময় শিবিরের কাছে টার্গেটকৃতদের আহত করার অভিনব কৌশল ছিল হাত-পায়ের রগ কাটা। একেবারে মেরে না ফেলে হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়ে ভয়ানক ত্রাসের জন্ম দেয় তারা। জানা গেছে, এক দশকে শিবির প্রতিপক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়ে চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণে বাধ্য করেছে।

প্রথম আলোর আরেকটি রিপোর্টে জানা যায় ২০১৩ সালে  রংপুর কারমাইকেল কলেজে বুধবার দুপুরে যখন কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোশাররফ হোসেনের ওপর হামলা চলে, তখন তিনি একা ক্যাম্পাসে ছিলেন। ছাত্রলীগের অভিযোগ অনুযায়ী সেই সুযোগে শিবিরের ক্যাডাররা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ জানিয়েছে, কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতিকে গ্রেপ্তার করার কারণে তারা এ ধরনের চোরাগোপ্তা হামলার কৌশল নিয়েছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির রগ কাটার জন্য কুখ্যাত ছিলো। বিডি নিউজ ২৪ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী সেইবছর ১৯ সেপ্টেম্বর শেরেবাংলা হলের সামনে ছাত্রমৈত্রীর নেতা জুবায়ের চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা। ১৯৯৪ সালে ছাত্রমৈত্রীর নেতা প্রদ্যুত রুদ্র চৈতী পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনের রাস্তায় শিবিরকর্মীরা তার হাতের কব্জি কেটে নিয়ে যায়।

১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফরহাদের হাতের কব্জি কেটে নিয়ে যায় শিবিরকর্মীরা। ওইদিন ছাত্রদলের আরও ২৫ নেতাকর্মীর হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির।

এরপর ১৯৯৯ সালের ১৬ নবেম্বর রাতে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস ছাড়া করার পরবর্তী এক দশক শিবিরের রগ কাটার রাজনীতি প্রায় বন্ধ ছিল।

আবার ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে শিবির আবারও রগ কাটার রাজনীতিতে অন্ধকার পথে ফিরে আসে। ওইদিন শিবির ছাত্রলীগ কর্মী ফিরোজ হোসেন, আরিফুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম এবং সাইফুর রহমান বাদশাসহ ৬ জনের হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। এর পর প্রায় আড়াই বছরের অধিক সময় শিবিরের রগ কাটার রাজনীতি বন্ধ ছিল। জামায়াত-শিবির সারা দেশেই এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ করলেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সবচেয়ে বেশীসংখ্যক মানুষের হাত-পায়ের রগ কেটেছে শিবির। শিবিরের এ রগকাটার রাজনীতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে তা কোনদিনই মুছে যাবার নয়। গত পাঁচ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকার অন্তত ১৫ নেতাকর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটেছে এরা । যাদের রগ কটেছে এদের সবাই এখন পঙ্গু। শিবিরের এ রগকাটার রাজনীতির কারণে পঙ্গুত্ব বরণের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছেই।  ২০১৪ সালে গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে ক্ষান্ত হয়নি শিবির,  ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, এ সেই পঙ্গু মাসুদকে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা।

স্থানীয় একটি দোকানের পেছনে নিয়ে মাসুদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। তারা মাসুদের ডান পায়ের গোড়ালি থেকে পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ছবি: শহীদুল ইসলাম
স্থানীয় একটি দোকানের পেছনে নিয়ে মাসুদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। তারা মাসুদের ডান পায়ের গোড়ালি থেকে পায়ের পাতা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ছবি: শহীদুল ইসলাম/ প্রথম আলো
ক্যাম্পাসে নৃশংসতার শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদকে গতকাল ঢাকায় আনার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয় ।  প্রথম আলো
ক্যাম্পাসে নৃশংসতার শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদকে গতকাল ঢাকায় আনার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয় । প্রথম আলো
নৃশংসতার শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক টগর মো. সালেহকেও গতকাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয় ।  প্রথম আলো
নৃশংসতার শিকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক টগর মো. সালেহকেও গতকাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হয় । প্রথম আলো

সর্বশেষ ২৮ এপ্রিল ২০১৪ মঙ্গলবার দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতাকর্মীর রগ কেটে দেয়া হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে নৃশংস ও বর্বর হামলায় ডান পা হারালেন ছাত্রলীগের নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদ (২০)। তাঁর বাঁ পা-ও গোড়ালি থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কেটে দেওয়া হয়েছে দুই হাতের রগ। তাঁর সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগের আরেক নেতা টগর মোহাম্মদ সালেহকে (২২) কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঝামাঝি স্থানে এ হামলা হয়। গুরুতর আহত এ দুজনকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্র, পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় জাতীয় হূদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শেষে তাঁদের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়া হয়। আহত দুজন, ছাত্রলীগ ও পুলিশের অভিযোগ, ইসলামী ছাত্রশিবির এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সূত্রঃ প্রথম আলো ১, ২। প্রথম আলো

ফের রগ কাটার রাজনীতি: গাইবান্ধার যুবলীগ নেতাকে হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সোনারায় ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম এক সঙ্গীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা বামনডাঙ্গা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের শাখামারা ব্রিজ এলাকায় তার উপর হামলার শিকার হন। প্রথম ৭-৮ জন হঠাৎ রশি টেনে মোটরসাইকেল গতিরোধ করে। এরপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে জাহিদুলের দুই হাত ও দুই পায়ের রগ কেটে দেয় এবং মাথাসহ শরীরে একাধিক কোপ দেয়। লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় তার সঙ্গে থাকা কবিরকে। পরে স্থানীয় লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এরপর জাহিদুলকে দ্রুত রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত পৌনে ৩টার দিকে মারা যান তিনি। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল আলম সরকার লেবু বলেন, ‘ঘটনাটি পরিকল্পিত। হামলার সময় জাহিদুল কয়েকজনকে চিনতে পেরেছিলেন। এদের মধ্যে মুছা, সামু, ইমতিয়াজ ও খাদেমুল জামায়াত, শিবির ও বিএনপি কর্মী। অন্য হামলাকারীরা জামায়াত-শিবিরের কর্মী।’ সুত্রঃ দৈনিক কক্সবাজার

কক্সবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেনের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে শিবির ক্যাডাররা। এসময় সাখাওয়াতকে ব্যাপক মারধরও করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজ সংলগ্ন এলাকায় শিবির নেতা তারেক আজিজ এর নেতৃত্বের একদল ক্যাডার এ ঘটনা সংঘটিত করে। কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতেয়াক আহমদ জয় জানান, কক্সবাজার সরকারি কলেজ সংলগ্ন এলাকায় সাখাওয়াতের বাড়ি। শিবিরের ক্যাডার তারেক আজিজ বিস্ফোরণ মামলাসহ কয়েকটি মামলার আসামী। যার মধ্যে একটি মামলার বাদী সাখাওয়াত নিজেই। পুলিশের রদবদলের সুযোগকে পুঁজি করে শিবিরের শক্তি পরীক্ষার জন্য এ হামলার ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। কোন কারণ ছাড়াই বাড়ির সামনে থেকে তাকে তুলে হাত-পায়ের রগ কেটে ব্যাপক মারধর করে পালিয়ে যায় শিবির নেতা তারেক আজিজ এর নেতৃত্বের একদল ক্যাডার। তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আনা হয়। ওখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।সুত্রঃ একুশে টিভি 

একাত্তর থেকে শিবিরের বর্বরতার ইতিহাস জানা যায় বিশদভাবে

১৯৮১ সালের মার্চ: প্রতিষ্ঠার মাত্র ৩ বছরের মাথায় শিবির ক্যাডাররা চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে কলেজ ক্যাম্পাসেই কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। কিরিচের এলোপাতাড়ি কোপে গুরুতর আহত তবারক যখন পানি পানি করে কাতরাচ্ছিলো তখন এক শিবিরকর্মীরা তাঁর মুখে প্রস্রাব করে দেয়।

১৯৮২ সালের ১১ মার্চ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ৩টি যাত্রীবাহী বাস ভর্তি বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে এসে শিবির ক্যাডাররা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। এই সহিংস ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ৮২ সালের ১১ মার্চ শিবির ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যাবার পর ছাত্রলীগ খণ্ড খণ্ড মিছিল বের করলে শিবিরের কজন সন্ত্রাসী প্রশাসন ভবনের সামনে অকষ্মাৎ ছাত্রলীগের মিছিলে হামলা করে রাকসু জিএস খন্দকার জাহাঙ্গীর কবির রানা, ছাত্রলীগ সভাপতি বজলার রহমান ছানা (প্রয়াত বিচারপতি), ছাত্রলীগ নেতা আমিরুল আলম মিলনকে মারপিট করে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে হবিবুর রহমান হল ছাত্র সংসদের ভিপি, লিয়াকত আলী তালুকদার, লাল পান্না (জয়পুর হাট), আইন বিভাগের ছাত্র রবিউল আলম বুদু (বর্তমান সুপ্রীম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবি) ও সাখাওয়াত হোসেন সাখোসহ আরো কয়েকজন দ্রুত এসে তাদেরকে উদ্ধার করে এসএম হলে সাখোর রুমে নিয়ে যায়। তারপর শুরু হয় পুলিশি অ্যাকশন। যে যার মত ক্যাম্পাস থেকে সরে যায়। পরের দিন ১২ মার্চ লিয়াকত আলী তালুকদার, লাল পান্না, রবিউল আলম বুদু ও সাখোসহ ৮/১০ জন সকাল ১০ টার দিকে শহীদ শিক্ষক জ্বোহার কবরের পাশে সমবেত হয়ে প্রশাসন ভবনের পশ্চিম মাঠে (যেখানে আগের দিন ১১ মার্চ শিবির সমবেত হয়েছিলো) প্রায় শূন্য ক্যাম্পাসে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভায় সাখাওয়াত হোসেন সাখো তার বক্তব্যে, ক্যাম্পাসে শিবির তথা সাম্প্রদায়িক শক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তারপর কমপক্ষে ১০ বছর তা বলবৎ ছিলো।

১৯৮৪ সাল: চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলের ১৫ নম্বর কক্ষে শিবিরকর্মীরা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও মেধাবী ছাত্র শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে, এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে আহত হয় অসংখ্য ছাত্রলীগকর্মী। তৎকালীন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র শিবির সভাপতি সৈয়দ জাকিরের নেতৃত্বে শাহদাত হোসেনকে জবাই করা হয়। শাহদাত হত্যাকাণ্ড মামলার অন্যতম চার্জশিটভুক্ত আসামী সৈয়দ জাকির, কিন্তু অদৃশ্য কারণে জামিনে থেকেই খোদ রাজধানী ঢাকার বুকে প্রকাশ্যে রমরমা প্রকাশনা ব্যবসা করে যাচ্ছে এই ঘৃণিত খুনী, বর্তমানে এ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স-এর প্রকাশক এই কুখ্যাত খুনি ছাত্র শিবিরের সৈয়দ জাকির।

১৯৮৬ সাল: শিবিরকর্মীরা ডান হাতের কবজি কেটে নেয় ছাত্রনেতা আবদুল হামিদের। পরবর্তীতে ওই কর্তিত হাত বর্ষার ফলায় গেঁথে তারা উল্লাস প্রকাশ করে।

১৯৮৮ সালের ৩১ মে: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ প্রধান ছাত্রাবাসের সামনে কলেজের প্রিন্সিপাল ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ ও শত শত শিক্ষার্থীদের সামনে ছাত্রমৈত্রীর নেতা ডাক্তার জামিল আক্তার রতনকে কুপিয়ে হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে শিবিরের ক্যাডাররা, এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে আহত হয় অসংখ্য ছাত্রলীগ ও ছাত্রমৈত্রীর কর্মীরা।

১৯৮৮ সাল: চাঁপাইনবাবগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে তাঁর নিজ বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা, তাঁর খণ্ডিত মাথা তাঁর বাড়ির প্রধান দরজার সামনে পুরো দিন ঝুলিয়ে রাখে।

১৯৮৮ সালের জুলাইর প্রথম সপ্তাহ: বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমির আলী হল ছাত্র সংসদের জিএস ও জাসদ ছাত্রলীগ নেতা প্রিন্সসহ ২০ থেকে ২৫ জন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে।

১৯৮৮ সালের ১৭ জুলাই: ভোর সাড়ে চারটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্ মাখদুম হলে বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা হামলা চালায় এবং জাসদ ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি ও সিনেট সদস্য আইয়ূব আলী খান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য আহসানুল কবির বাদল এবং হল সংসদের ভিপি নওশাদের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। এই ঘটনায় প্রতিবাদ করতে আহত হয় ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মী।

১৯৮৮ সাল: সিলেটে শিবির ক্যাডাররা ছাত্রলীগ নেতা মুনীর, জুয়েল ও তপনকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করে।

১৯৮৮ সালের আগস্ট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. ইউনুসের বাসভবনে ছাত্র শিবির বোমা হামলা করে। এতে অধ্যাপক ইউনুস বেঁচে গেলেও তাঁর বাড়ির কর্মচারী আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে।

১৯৮৯ সালের রমজান মাস: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র গাজী গোলাম মোস্তফাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী চপাড়ায় ইফতারের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়ে হাতের রগ কেটে দেয় ছাত্র শিবির ক্যাডাররা, আজও পঙ্গুত্ব নিয়েই বেঁচে আছেন তিনি।

১৯৮৯ সালের নভেম্বর: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে সন্ধ্যায় জাসদ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর শিবিরের বোমা হামলায় দুইজন নিহত এবং ছাত্রনেতা বাবু, রফিকসহ ১০ জন আহত হয়।

১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর: ছাত্রমৈত্রীর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি ফারুকুজ্জামান ফারুককে শিবিরের ক্যাডাররা জবাই করে হত্যা করে তাঁর খণ্ডিত মাথা প্রকাশ্য রাস্তায় দুই ঘন্টা রেখে দেয়।

১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ: পবিত্র রমজান মাসে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র শিবির সভাপতি সৈয়দ জাকিরের (বর্তমানে এ্যাডর্ন পাবলিকেশন্স-এর প্রকাশক) নিয়ন্ত্রণাধীন কুখ্যাত সিরাজুস সালেহীন বাহিনীসহ কয়েক হাজার সশস্ত্র বহিরাগত ছাত্র শিবির সন্ত্রাসী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেলা ১১ টার সময় অতর্কিত হামলা চালালে ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত পিটু নিহত হয় এবং ছাত্রলীগের আইভি, নির্মল, লেমন, রুশো, জাফু, ফারুক এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের রাজেশসহ প্রায় দেড় শাতাধিক ছাত্র-ছাত্রী আহত হয়। এদের অধিকাংশেরই হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয় এবং রাজেশের কব্জি কেটে ফেলা হয়। এই হামলার সময় শিবির ক্যাডাররা শাহ্ মাখদুম হল, আনোয়ার হল এবং লতিফ হল আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ব্যাপক আকারে গান পাউডারের ব্যবহার করায় হলের জানালার কাঁচগুলো গলে গিয়েছিলো। লতিফ হলের অনেকগুলো কক্ষ এখনো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এই হামলার তীব্রতা এতটাই ছিলো যে, বেলা ১১টায় শুরু হওয়া হামলা রাত ৩টায় বিডিআর নামানোর আগ পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।

১৯৯২ সালের মে: ছাত্র শিবিরের ছাত্রী উইং ইসলামী ছাত্রী সংস্থা রাজশাহী কলেজ শাখার নেত্রী মুনীরা বোমা বহন করার সময় বিষ্ফোরণে মারা যায় এবং তার সহযাত্রী-সহকর্মী আপন খালা এবং ওই রিকশাওয়ালা আহত হয়, এই মুনীরা ওই সময়ে আটজন সাধারণ মানুষকে বোমা নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করে।

১৯৯২ সালের ১৯ জুন: শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে দেশের প্রধান যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের হরতাল কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে মিছিল চলাকালে শিবিরের সশস্ত্র হামলায় রাজশাহীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে ওই আন্দোলনের অন্যতম নেতা মুকিম মারাত্মকভাবে আহত হয়, পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ জুন তিনি মারা যান।

১৯৯২ সালের আগস্ট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী নতুন বুথপাড়ায় শিবির ক্যাডার মোজাম্মেলের বাড়িতে বোমা বানানোর সময় শিবির ক্যাডার আজিবরসহ অজ্ঞাতনামা অন্তত আরো তিনজন নিহত হয়। বিষ্ফোরণে পুরো ঘর মাটির সাথে মিশে যায় এবং টিনের চাল কয়েক’শ গজ দুরে গাছের ডালে ঝুলতে দেখা যায়। পরবর্তীতে পুলিশ মহল্লার একটি ডোবা থেকে অনেকগুলো খণ্ডিত হাত পা উদ্ধার করে। যদিও শিবির সাংগঠনিকভাবে আজিবর ছাড়া আর কারো মৃত্যুর কথা স্বীকার করেনি। পুলিশ বাদী হয়ে মতিহার থানায় শিবির ক্যাডার মোজাম্মেলকে প্রধান আসামী করে বিষ্ফোরক ও হত্যা মামলা দায়ের করে। প্রায় ৫ বছর পলাতক থাকার পর মামলা ম্যানেজ করে মোজাম্মেল এলাকায় ফিরে আসে এবং জামাতের রাজনীতিতে পুনরায় সক্রিয় হয়ে খুনের রাজনীতিতে ফিরে আসে।

১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালালে ছাত্রলীগ ও সাবেক ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মিলে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ওপর শিবিরের হামলায় ছাত্রনেতা বিশ্বজিৎ, সাধারণ ছাত্র এবং ছাত্র ইউনিয়নের তপনসহ ৫জন ছাত্র নিহত হয়।

১৯৯৯ সাল: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এনামুল হকের ছেলে মোহাম্মদ মুছাকে শিবিরকর্মীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে তার মাথা বাসার গেটের সামনে ঝুলিয়ে রাখে।

১৯৯৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর: বহিরাগত সশস্ত্র শিবির কর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলে হামলা চালিয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা বিশ্ববিদ্যালয় টিমের মেধাবী ক্রিকেটার জুবায়েদ চৌধুরী রিমুকে হাত-পায়ের রগ কেটে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে।

১৯৯৪ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে আসার পথে তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের সামনের রাস্তায় ছাত্রমৈত্রী নেতা প্রদুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কব্জি কেটে নেয় শিবির কর্মীরা।

১৯৯৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি: শিবির কর্মীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী চৌদ্দপাই নামক স্থানে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী সকাল-সন্ধ্যা বাসে হামলা চালিয়ে ছাত্রমৈত্রীর নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য রূপমকে বাসের মধ্যে যাত্রীদের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার আগে বর্বর শিবির ক্যাডাররা তাঁর হাত ও পায়ের রগ কেটে নেয়।

১৯৯৬ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংস্কৃতিকর্মী আমান উল্লাহ আমানকে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্র শিবিরের ক্যাডারেরা এবং অন্য একজন ছাত্রের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়। এদের বাঁচাতে এসে দুইজন সহপাঠী ছাত্রী এবং একজন শিক্ষকও আহত হয়।

১৯৯৭ সাল: চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট দখল করার জন্য শিবির ক্যাডাররা ছাত্র সংসদের ভিপি মোহাম্মদ জমির ও ছাত্রনেতা ফরিদউদ্দিন আহমদকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পরেও পায়ের রগ কেটে পুনরায় নিশ্চিত হয় ওরা মৃত।

১৯৯৭ সাল: বঙ্গবন্ধু পরিষদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অধ্যাপক আবদুল খালেকসহ প্রায় কুড়িজন শিক্ষকের বাসায় বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে ছাত্র শিবির ক্যাডারেরা।

১৯৯৭ সাল: গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত শিবির সন্ত্রাসীদের হামলায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম পুলিশ ক্যাম্পেও বোমা হামলা করে শিবির ক্যাডারেরা।

১৯৯৮ সাল: শিক্ষক সমিতির মিটিং থেকে ফেরার পথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে অধ্যাপক মো. ইউনূসের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় ছাত্র শিবিরের ক্যাডারেরা। ছাত্র-কর্মচারীদের প্রতিরোধে সেই যাত্রায় অধ্যাপক ইউনূস প্রাণে বেঁচে গেলেও মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি।

১৯৯৯ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ৭১-এর গণকবরে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য স্থাপিত ভিত্তিপ্রস্তর রাতের আঁধারে ছাত্র শিবির ভাঙতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মচারী বাঁধা দেন। ফলে শিবির ক্যাডাররা তাঁকে কুপিয়ে আহত করে এবং ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙে ফেলে।

১৯৯৮ সালের ২২ আগস্ট: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী সঞ্জয় তলাপাত্রকে হত্যা করে শিবির ক্যাডাররা।

২০০০ সাল: চট্টগ্রামের বদ্দারহাটে শিবির ক্যাডাররা মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা ৮ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে ব্রাশফায়ার করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও পায়নি নিহতের পরিবারেরা।

২০০১ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী হলে বহিরাগত অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত ছাত্রী বিক্ষোভে সশস্ত্র শিবির কর্মীরা কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালায় এবং ছাত্রীদেরকে লাঞ্ছিত ও রক্তাক্ত করে।

২০০১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহাকে ছাত্র শিবির কর্মীরা হাত-পা বেঁধে জবাই করার চেষ্টা করে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা টের পাবার ফলে, তাদের হস্তক্ষেপে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

২০০২ সাল: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নেতা সুশান্ত সিনহাকে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয় শিবির কর্মীরা; এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে ছাত্রলীগের সাথে ব্যাপক আকারে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় শিবিরের

২০০৪ সালের ২৫ জুলাই: শিবির ক্যাডার রবি ও রোকনের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল রাজশাহী ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সুশান্ত সিনহার ওপর হামলা চালায়। ইট দিয়ে জখম করার পামাপাশি তার মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালায় শিবির ক্যাডাররা, এই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রফ্রন্টের পাশে এসে দাঁড়ায় আজন্ম প্রগতিশীল ছাত্রলীগ।

২০০৪ সাল: পুনরায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে বহিরাগত অনুপ্রবেশকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত ছাত্রী বিক্ষোভে সশস্ত্র ছাত্র শিবির কর্মীরা হামলা চালায়।

২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর: অধ্যাপক মো. ইউনূসকে ফজরের নামাজ পড়তে যাবার সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যদিও এই হত্যা মামলায় ছাত্র শিবির ও জেএমবির দুইজন সদস্যকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালে দুই দফায় ছাত্র শিবির তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিলো।

২০০৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর: বরিশালের বাবুগঞ্জের আগরপুর ইউনিয়নের ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শামীম আহমেদকে শিবির ক্যাডাররা কুপিয়ে ও হাত-পায়ের রগ কেটে হত্যা করে।

২০০৪ সালের ৩০ অক্টোবর: জামাতের বর্তমান রাজশাহী মহানগরের আমীর আতাউর রহমান এবং প্রক্টর নূরুল আফসারের উপস্থিতিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের মিছিলে হামলা চালিয়ে শিবির ক্যাডাররা প্রায় অর্ধশতাধিক ছাত্রীকে রক্তাক্ত করে।

২০০৫ সালের ১০ ডিসেম্বর: সন্ধ্যায় জুবেরী ভবনের সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এস এম চন্দনের ওপর হামলা চালিয়ে তার রগ কেটে নেওয়ার চেষ্টা চালায় শিবির ক্যাডাররা।

২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাতপন্থী শিক্ষক মহিউদ্দিন এবং ছাত্র শিবির সভাপতি মাহবুব আলম সালেহীনসহ আরো দুইজন শিবির ক্যাডার মিলে একযোগে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবু তাহেরকে হত্যা করে।

২০০৬ সালের ২১ আগস্ট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘সেকুলারিজম ও শিক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দেওয়ার অপরাধে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তার ওপর হামলা চালায় ছাত্র শিবির। প্রকাশ্য সমাবেশে তারা অধ্যাপক হাসান আজিজুল হকের গলা কেটে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির কর্মীরা হাত ও পায়ের রগ কেটে দেওয়ার পর হাবিবুর রহমান হলের মেঝেতে পড়ে আছে ছাত্রলীগ কর্মী বাদশা। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/ রাজশাহী, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১০

২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে ম্যানহোলের মধ্যে ফেলে রাখে শিবিরের ক্যাডাররা।

২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি: মতিঝিলের ব্যাংক কর্মচারী জাফর মুন্সীকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে শিবির ক্যাডারেরা। মাথা থেতলে দেওয়া হয় জাফর মুন্সীকে। পরে হাসপাতালে বসে মারা যান জফার মুন্সী।

২০১৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত করে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির কর্মীরা। এর পিছনে মদদ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিসহ প্রগতিশীল নামধারী কিছু শিক্ষক। এখানে জাবি ভিসি’র মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়ে কটাক্ষ করা হয়, এবং ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহ আকবর’ বলে শ্লোগাণ দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল: জঙ্গি ছাত্র শিবির ও হিযবুত তাহরিরের সশস্ত্র কর্মীদের কার্যক্রমে বাধা দেওয়ায় বুয়েট ছাত্র আরিফ রায়হান দ্বীপের ওপর হামলা চালানো হয়। বুয়েট ক্যাম্পাসে দুর্বৃত্তরা তাঁকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। তিন মাসের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্কয়ার হসপিটালে মারা যান দ্বীপ। দ্বীপকে খুনের অপরাধে মেজবাহ নামের বুয়েটের এক ছাত্রকে গ্রেফতারের পর দ্বীপের ওপর হামলায় ছাত্র শিবিরের জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসে।

২০১৩ সালের ১৩ এপ্রিল: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুরে চট্টগ্রাম শহর থেকে দলীয় অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের তিনশ’য়ের উপরে নেতাকর্মীর উপর আক্রমণ করে হাজারের উপরে শিবির ক্যাডারেরা, এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয় প্রায় সব নেতাকর্মী; মৃত্যুবরণ করেন তিনজন, পঙ্গুত্ববরণ করে এখনো বেঁচে আছেন প্রায় ৬০ জন নেতাকর্মী।

 ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট: শোক দিবসের আলোচনা শেষে আমীর আলী হল থেকে মাদার বখশ্ হলে ফেরার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল তুহিনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের সদস্যরা। তুহিনের পায়ের রগ কেটে দেওয়া হয়, হাতের আঙুল কেটে নেওয়া হয়।

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বেনজীর আহমেদের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সরকারি শাহ সুলতান কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিয়ে রিকশায় করে ফেরার পথে তিনি হামলার শিকার হন।ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে বেনজীরের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন বলে জেলা ছাত্রলীগের নেতারা অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত শিবিরের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে জেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সন্ধ্যায় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। পুলিশও হামলার জন্য শিবিরের নেতা-কর্মীদের সন্দেহ করছে। তবে শিবিরের নেতারা হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বেনজীর অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর শেষ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে শহরের সাতমাথায় ছাত্রলীগের সমাবেশে যোগ দিতে রিকশায় করে যাওয়ার পথে শেরপুর-সাতমাথা সড়কের কানুছগাড়ী এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন তিনি। এ সময় দৌড়ে রাস্তার পাশের একটি ওষুধের দোকানে আশ্রয় নিলে সেখানেই রামদা-চাকুসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁকে কুপিয়ে হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় সন্ত্রাসীরা। পরে তারা ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।

সূত্রঃ প্রথম আলো

পদ্মা ট্রিবিউন বলছে রংপুর কারমাইকেল কলেজকে কেন্দ্র করেও ছাত্রশিবির শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলছিল। কলেজের হোস্টেলগুলো তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কলেজের পাশের কলেজপাড়া, দর্শনা, মর্ডান মোড়সহ আশপাশের এলাকায় নব্বই ও তার পরের সময়ে ছাত্রশিবিরের প্রচুর ছেলে বিয়ে করে আত্মীয়তা তৈরি করেন। কলেজে সমস্যা হলেই এসব এলাকা থেকে বহিরাগতদের নিয়ে আসত।

রংপুর কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন বলছিলেন, তিনি ১৯৮৯ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। তখন ছাত্রশিবিরের ব্যাপক তাণ্ডব। কেউ কিছু বললে রেহাই দিত না।

শিবিরের হামলায় নিহত ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হত্যার বিচারের এই দাবি কখনও পূরণ হয়নি

১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে তার ওপর হামলা হয়। আগের দিন রংপুর শহরে একজন দোকানদারকে মারধর করে ছাত্রশিবিরের কয়েকটি ছেলে। তারা তার প্রতিবাদ করেছিলেন।

মামুন বলছিলেন, পরদিন কলেজে পা দিয়েই বুঝতে পারি, ওরা প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। আমি ছাত্রলীগের যারা নেতাকর্মী ছিল সবাই ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বলি। কারণ, আমাদের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। সবাইকে বের করে দিয়ে জিএল হোস্টেলের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেলে ফিরছিলাম। তখনি শিবিরের ২৫-৩০ জন আমাকে ধরে হলের ভেতরে নিয়ে যায়। বলে, ‘ছাত্রলীগ করস, আয় তোরে বানায়া দিচ্ছি’। মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। তার পর দা দিয়ে কোপানো আর রড দিয়ে পেটানো শুরু করে। আমি মেঝেতে পড়ে যাই। একবার দরজায় গিয়ে জোরে আঘাত করলে সেটির ছিটকানি ভেঙে যায়। তখন সাধারণ ছাত্ররা বিষয়টি বুঝতে পেরে শিক্ষকদের খবর দেয়। তারা আমাকে উদ্ধার করতে আসে। কিন্তু ওরা তো চিকিৎসা করতে দেবে না। ওটাই ছিল ওদের কৌশল। মেরে ফেলে রাখবে। নিজেরা পাহারা দেবে, যে পর্যন্ত না বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। ওদের বাধার মধ্যেই শিক্ষক-ছাত্ররা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মামুন বলছিলেন,

“সেদিন বেঁচে যাই বটে; কিন্তু চিরকালের মত আমি পঙ্গু হয়ে গেছি।”

ছাত্র ইউনিয়নের কলেজ শাখার সভাপতি কামরুজ্জামান ছিলেন জিএল হোস্টেলের ছাত্র। তিনিও ছাত্রশিবিরের হামলার শিকার হন। 

চট্টগ্রামে শিবিরের হাতে নিহত কর্মীর স্মরণে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীদের শপথ | ছবি: সংগৃহীত

এছাড়াও শিবিরের রগ কাটার আরো অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। অতীতে বর্তমানের মতো অনলাইন আর্কাইভ বা তথ্য প্রযুক্তির অবাধ সুযোগ সুবিধা না থাকায় অনেক তথ্য সংবাদপত্রের আর্কাইভ ঘেঁটে বের করতে হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধান চলমান। শিবিরের রগ কাটা, বর্বর হত্যাকান্ড, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নিয়ে ‘ট্রু গেজেট’র আরো পর্ব সামনে আসবে। উপরের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে, ‘রগ কাটা’ যেন শিবির নামের সমার্থক হয়ে উঠেছে। 

ছাত্রলীগ নেতার হাত-পায়ের রগ কাটলো শিবির

চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক জালালের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে ছাত্রশিবির । শনিবার সন্ধ্যায় তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে এই ঘটনা ঘটে।গুরুতর আহত জালালকে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। অন্যদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা শনিবার রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে । সুত্রঃ রাইজিং বিডি

ছাত্রলীগ নেতার হাত-পায়ের রগ কাটলো শিবির

  ছবিঃজালালের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে ছাত্রশিবির

বাংলানিউজ ২৪ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ৩২ বছরে (১৯৮১-২০১৩) শিবিরের হাতে নিহত ৩২ ছাত্র।

১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম সিটি কলেজের নির্বাচিত এজিএস ছাত্রলীগ নেতা তবারক হোসেনকে হত্যা করে শিবির। এটি ছিল শিবিরের প্রথম হত্যা।

এরপর থেকে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চালায় শিবির। ১৯৮২ সালের ১১ মার্চ শিবিরের হামলায় মারা যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মীর মোশতাক এলাহী।

১৯৮৪ সালে শিবির চট্টগ্রাম কলেজের সোহরাওয়ার্দী হলে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও মেধাবী ছাত্র শাহাদাত হোসেনকে জবাই করে হত্যা করে। ১৯৮৬ সালে জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতা আবদুল হামিদের হাতের কবজি কেটে নেয় শিবির ক্যাডারা।

১৯৮৮ সালে শিবিরের ক্যাডার বাহিনী ছাত্রমৈত্রী নেতা ডাক্তার জামিল আক্তার রতনকে কুপিয়ে ও হাত পায়ের রগ কেটে হত্যা করে। একই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ নেতা জালালকে হত্যা করে তারা।

ওই বছরের ১৭ নভেম্বর শিবিরের হামলায় মারা যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসলাম হোসেন। এর পরদিনই শিবিরের হামলায় মারা যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র  আজগর আলী।

ওই বছর ঘটেছে আরও কয়েকটি হত্যার ঘটনা। ১৭ জুলাই এসএম হলে বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা হামলা চালিয়ে জাসদ ছাত্রলীগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ সভাপতি ও সিনেট সদস্য আইয়ুব আলী খান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সিনেট সদস্য আহসানুল কবির বাদল ও হল সংসদের ভিপি নওশাদের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয়।

একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. ইউনূসের বাসভবনেও বোমা হামলা চালানো হয়।

১৯৮৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তিন জনকে হত্যা করে সিলেটের রাজনীতির ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি করে ছাত্রশিবির। এদিন শিবির ক্যাডাররা জাসদ ও ছাত্রলীগের মেধাবী নেতা মুনীর-ই-কিবরিয়া চৌধুরী, তপন জ্যোতি ও এনামুল হক জুয়েলকে হত্যা করে।

১৯৮৯ সালের ১৮ এপ্রিল শিবিরের হামলায় মারা যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শফিকুল ইসলাম। ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রমৈত্রীর সহ সভাপতি ফারুকুজ্জামানকে।
   
১৯৯২ সালের ১৭ মার্চ গুলি করে হত্যা করা হয় জাসদ ছাত্রলীগ কর্মী ইয়াসির আরাফাত। এ বছর শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে করা আন্দোলনে শিবির হামলা করে। এতে আহত হন জাসদ নেতা মুকিম। পাঁচদিন পর তিনি মারা যান।

১৯৯৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর খুন হন ছাত্রমৈত্রী নেতা জুবায়ের হোসেন রিমু। ১৯৯৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৈত্রী নেতা প্রদ্যুৎ রুদ্র চৈতীর হাতের কব্জি কেটে নেওয়া হয়। ১৯৯৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শিবিরের হাতে খুন হন ছাত্রমৈত্রীর আরেক নেতা দেবাশীষ ভট্টাচার্য।

ট্রু গেজেটের অনুসন্ধানে ছাত্রশিবির কর্তৃক শতাধিক হত্যা এবং রগ কাটা নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে,যা বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্র শিবিরকে পরিণত করেছে। ছাত্রশিবিরের রগ কাটা বর্বরতা থেকে ছাত্রদল,ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন সহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা বাদ যায়নি। হজার হাজার শিক্ষার্থী ছাত্র শিবিরের রগ সন্ত্রাসের শিকার সেই ১৯৮১ সাল থেকে ২০২৫ এই বর্বরতা আজ ও চলমান।

এছাড়া বিশ্বখ্যাত নিরাপত্তা বিষয়ক থিঙ্কট্যাংক আইএইচএস জেনস গ্লোবাল টেরোরিজম অ্যান্ড ইনসারজেন্সি অ্যাটাক ইনডেক্স-২০১৩ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বের সবচেয়ে সহিংস ও তৎপর সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রথম তিনটির একটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্র শিবির। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নাম উঠে এসেছে শীর্ষ দশ সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায়। আফগানিস্তানের তালিবানের পরপরই রয়েছে ছাত্র শিবিরের নাম। সূত্রঃ  বিডি নিউজ ২৪ 

এতোসব দুর্নাম শিবির আজও গোছাতে পারেনি। বর্তমানেও তারা গোপন রাজনীতি এবং প্রতিপক্ষের উপর বেনামি সংগঠনের ছত্রছায়ায় বর্বর হামলা অব্যাহত রেছেছে। এখনো তাদের রগ কাটা নিয়ে প্রশ্ন বা জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে দেশেে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেগুলোতে। শিবিরের নাম শুনলেই যেন ভয় পায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা চায় সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন। এ নিয়ে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলমান রয়েছে।

Share This Article
error: Content is protected !!