জুলাই আন্দোলনের ছয় মাস পার হয়ে গেলেও এখনো কোন তালিকা প্রকাশ হয়নি হতাহতের সংখ্যা নিয়ে সমন্বয়ক এবং তাদের সরকার থেকে।মৃতের তালিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। সমন্বয়করা নিহতের সংখ্যা দুই তিন হাজার দাবি করলেও বাস্তবে সংখ্যা কতজন এই নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসের জন্ম দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রবেশ করলে দেখা যায় জুলাইয়ে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে মিম বা ট্রল। ইউনুস সরকার এবং সমন্বয়করা যদিও বলছে অতি শীঘ্রই প্রকাশ করবে তালিকা কিন্তু জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল ঢাকায় দুমাস ধরে অবস্থানের পর তথ্য না নিয়েই দেশ ছেড়ে যাওয়ায় রহস্য আরো ঘনীভূত হয়েছে।
‘ট্রু গেজেট’ অনুসন্ধিৎসু মনোভাব নিয়ে জুলাই আন্দোলনে হত্যার সংখ্যা নিয়ে দেশের মূলধারার সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্ট যাচাই বাছাই করছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দেওয়া তথ্যের সাথে দেশের মূল গণমাধ্যম এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্টের সাথে কোন সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হয়েছে জুলাই আন্দোলনে নিহত কয়েকজন ফিরে এসেছে,যা জনমনে নিহতের সংখ্যা নিয়ে দিন দিন প্রশ্ন জাগছে।এরকম কয়েকটি ঘটনা ট্রু গেজেট অনুসন্ধানে পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে, যা দেশের গণমাধ্যমেও এসেছে।
পুলিশের সাথে সংঘর্ষ। ছবি- ইএফই
ভূয়া মামলাঃ ১
আল আমিন নামে এক দিনমজুর যিনি জুলাইয়ে নিহত হয়েছেন বলে দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল ………
অভ্যুত্থানে ‘নিহত’ আল আমিনকে মিলল সিলেট দেশ রূপান্তর বলছে
আল আমিন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তাকে নিহত দেখিয়ে মামলা করার ঘটনায় তিনি জড়িত নন। তার ভাষ্য, পরিবারের অমতে ভালোবেসে তিনি কুলসুমকে বিয়ে করেন। কয়েক মাস ধরে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পুরো সময় তিনি স্ত্রীকে নিয়ে মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্ত্রী তাকে না জানিয়েই হত্যা মামলা করেছে। যাতে আল আমিন খুন হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। এরপর ভয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বাবার সঙ্গে আত্মগোপন করেন।
টিবিএস বলছে ৩ মাস পর স্বামী হাজির থানায় এসে নিজেকে জীবিত দাবি করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্ত্রীর মামলায় ‘নিহত’ উল্লেখ করা আল আমীন। মামলার বাদীর আইনজীবী এডভোকেট শামসুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন,
‘যেকোনো বাদী যখন সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্টস নিয়ে আমাদের কাছে আসেন, আমরা ডকুমেন্টস দেখে মামলা করে দেই। এই মামলার বাদী তার স্বামী মারা গেছে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে লাশের গোসল থেকে শুরু করে দাফন পর্যন্ত ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে আমাদের কাছে আসেন। তারপর আমরা আদালতে মামলার আবেদন করি। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আশুলিয়া থানাকে মামলাটি নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। এর বেশি কিছু আসলে আমাদের জানা নেই’।
আল আমীন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন বলেন,
‘৫ আগস্ট সে (স্ত্রী) আমার সঙ্গে সিলেটেই ছিল। এর তিন-চার দিন পর ঝগড়া করে মানিকগঞ্জে চলে যায়। এরপর আর তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিন-চার দিন আগে শিপলু নামে এক ব্যক্তি ফোন করে জানান, আমি ৫ আগস্টের আন্দোলনে মারা গিয়েছি উল্লেখ করে সে (স্ত্রী) একটা মামলা করেছে। এটা জানার পর আমি দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়েছিলাম। একটা জিডি করি, ওসির সঙ্গে পরামর্শ করি। এরপর ওইখান থেকে তারা আমাকে আশুলিয়া থানায় পাঠিয়ে দেয়।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন,
আল আমীনকে উদ্ধার দেখিয়ে আজ তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি নিজে দাবি করছেন যে তার স্ত্রী তাকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছিলেন। আমরা মামলার বাদী, আল আমীনের স্ত্রী কুলসুমের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি, তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
দেশ রুপান্তর এবং বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায় আইনজীবী ও মামলার তদন্তকারী অফিসারের। আইনজীবীর ভাষ্য সত্য হলে হাসপাতাল থেকে লাশের গোসল থেকে শুরু করে দাফন পর্যন্ত ডকুমেন্টস সংগ্রহ পর্যন্ত কাজ গুলো কে করেছে? ডকুমেন্টগুলো কোন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে করা হয়েছে? কারা অনুমোদন দিয়েছে?
আবার আলামিনের ভাষ্য অনুযায়ী ৮-৯ আগস্ট পর্যন্ত তার স্ত্রী সিলেটে ছিলো,৯ আগস্ট তার স্ত্রী মানিকগঞ্জ যায়! মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আবার বলছেন মামলার বাদীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা আলামিন ফিরে আসার পর! এই তথ্য প্রমাণগুলো মামলাটিকে পরিস্কারভাবে পাতানো মামলা হিসেবে উপস্থাপন করছে।
ভূয়া মামলাঃ ২
রাজশাহীর নাজমুল হাসান জুলাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। কিন্তু তাকে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত দেখিয়ে তার ভাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন এবং জুলাই স্মৃতি সংসদ থেকে ৫ লক্ষ টাকার অনুদান ও নিয়ে দেন দেশ টিভি রিপোর্টে প্রকাশ করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন মিথ্যা মামলা করে স্থানীয় বিএনপি-জামায়তের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণে অর্থ আদায় করেছে এবং চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে পিটুনির হুমকি সহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
উক্ত ঘটনাগুলো জুলাইয়ের আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভ্রান্তিকর সংখ্যতত্বের দাবিকে আরো প্রাসঙ্গিক করছে। জুলাই আগস্টের আন্দোলনে কয়জন নিহত হয়েছে সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
বিডি নিউজ ২৪ এর ভাষ্যমতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলছে তাদের তালিকায় ১৫৮১ মৃত্যু লিপিবদ্ধ হয়েছে।
২৮ সেপ্টেম্বর,২০২৪ এ এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যবিষয়ক উপ কমিটির সদস্য সচিব তারেক রেজা বলেন,
“বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে গঠিত স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ কমিটি এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ প্রচেষ্টায় আমরা সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ব্যক্তিদের একটি প্রাথমিক তালিকা প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রাথমিক তালিকায় মোট ১,৫৮১ জন ব্যক্তির তথ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।“
অর্থাৎ সমন্বয়করা দাবি অনুযায়ী ১৫৮১ জন হত্যার স্বীকার হয়েছে। কিন্তু দেশের বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যম গুলো বলছে ভিন্ন কথা।
ডেইলি স্টার বলছে জুলাই অগাষ্ট আন্দোলনে ৬৩১ নিহত হয়েছে,যেখানে নিহত ছাত্র জনতা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সহ। ঢাকা বিভাগে ৪৭৭, চট্টগ্রামে ৪৩ এবং খুলনায় ৩৯ জন নিহত হয়েছে।বিবিসি তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ৬৪০ জন ছাত্র জনতা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং নিরাপত্তা বাহিনীসহ।জাতিসংঘ বলছে ৬৫০ হত্যার শিকার হয়েছে জুলাই অগাষ্ট আন্দোলনে।জুলাই আন্দোলনের সময় একটি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ওয়েবসাইট তৈরি হয় যার ঠিকানা SHOHID.INFO সেটি আন্দোলোনে এ যারা হত্যার শিকার হয়েছে লিস্ট প্রকাশ করতো সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী তাদের সংখ্যা ৬৫০+। কিন্তু তাদের ওয়েবসাইটটি রহস্যজনক ভাবে বন্ধ আছে।
১২ আগস্ট প্রকাশিত এক রিপোর্ট এ প্রথম আলো বলছে ‘’ তাদের কাছে থাকা ৫৮০ জনের লিস্ট আছে। এর মধ্যে ৪-৬ আগস্ট ছিল আন্দোলনের সবচেয়ে বিধ্বংসী সময়, ৩২৬ জন নিহত হ্ন ৪-৬ আগস্ট এই সময়ে যার মধ্যে আওয়ামী লীগের ৮৭ জন নেতাকর্মী, ছাত্র ২৩ জন , বিএনপির ১২ জন এবং পুলিশ ৩৬ জন হত্যার শিকার হন।এদিকে বিএনপি দাবি করছে তাদের ৪২২ জন নিহত, এবং সমকাল বলছে জুলাই আন্দোলনে।প্রাণ ঝরেছে মাদ্রাসার ৪৫ শিক্ষার্থীর। ২০ আগস্টে প্রকাশিত এক রিপোর্টে সমকাল আরো বলছে আন্দোলনে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১১৭ নেতাকর্মী এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৮৭ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রথম আলোর রিপোর্ট
রাজনৈতিক দলগুলোর বিশেষ করে বিএনপির ৪২২ জন নিহত হওয়াকে বেশ বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে দেশের মূল গণমাধ্যমগুলোর রিপোর্ট সত্য হয়ে থাকলে। প্রথম আলো এবং সমকালের ভাষ্য অনুযায়ী বিএনপির নিহত নেতাকর্মী কোনভাবেই ১০০ এর বেশি না।
প্রথম আলোর রিপোর্ট বলছে ছাত্র–জনতার আন্দোলন: মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, এখন পর্যন্ত ৭৫৭ জন গুলি, সংঘাত ও সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী, নারী, শিশু, নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।
অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম ট্রু গেজেট ১৭০ জন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী এবং ৫০ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হত্যার সংবাদ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো থেকে পাওয়া রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ তৎকালীন সরকার এবং তাদের রাজনৈতিক দলের সর্বমোট ২২০ জন হত্যার শিকার হন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে।
ঢাকা বিভাগে ৫০০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৫ জন, খুলনা বিভাগে ৭৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৬১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯ জন, রংপুর বিভাগে ২৫ জন, সিলেট বিভাগে ২০ জন এবং বরিশাল বিভাগে ১৩ জন মারা গেছেন।নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪৬ জনের মৃত্যুর ধরন বিশ্লেষণ করতে পেরেছে এইচআরএসএস। তাতে দেখা গেছে, ৪৫৫ জন গুলিতে, ৭৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে, ৭৮ জন পিটুনিতে ও ১০ জন ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এবং অন্যান্য কারণে ২৪ জন মারা গেছেন।
সমকালে ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত রিপোর্ট এ বলা হয়েছে ৮৭৫ জন নিহত হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) রিপোর্ট অনুযায়ী। নিহতদের মধ্যে সর্বাধিক ঢাকা বিভাগে ৫৪০, চট্টগ্রামে ৯১, খুলনায় ৮১,রাজশাহীতে ৬৪, ময়মনসিংহে ৩৮, রংপুরে ২৯, সিলেটে ২০ ও বরিশাল বিভাগে ১৩ জন মারা গেছেন। এই রিপোর্টে কে কোন রাজনৈতিক দলের তা অবশ্য দেখানো হয়নি একটি সামগ্রিক হিসেব দেখানো হয়েছে।
মেয়র জাহাঙ্গীরের পি এস কে বৈষম্য বিরোধীরা হত্যা করেছিল আন্দোলনের সময়,কিন্তু তাদের করা তালিকায় শহীদ হিসেবে তার নাম উঠে এসেছে।
উল্লিখিত রিপোর্ট গুলোর ভাষ্য আমলে নিলে দেড় দুই হাজার মানুষের মৃত্যুর দাবি একেবারে অমূলক। আমাদের অনুসন্ধানে পরিস্কার ৬৫০-৯০০ জন মানুষ নিহত হয়েছেন জুলাই আগস্ট এর আন্দোলনে আওয়ামী লিগ,বি এন পি, জামায়াত, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলোনের অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা সহ। অর্থাৎ সামগ্রিক পরিস্থিতি হিসেব করলে জুলাইয়ের আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ৮৮০ জনের কাছাকাছি দেশের প্রথম সারির গনমাধ্যম,জাতিসংঘ কিংবা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর রিপোর্ট অনুযায়ী। নিহতদের এক তৃতীয়াংশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য। কোন একক রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিসেব করলে সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এদিকে জাতিসংঘের তদন্ত কমিটি দুই মাস ঢাকায় অবস্থান করার পরেও ইউনূস সরকার জুলাই আন্দোলনে নিহতদের তালিকা দিতে পারেনি।
পুলিশের সাথে সংঘর্ষ। ছবি- আল জাজিরা
২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক রিপোর্টে সমকাল লিখেছে অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে দু’দফা বাংলাদেশে আসে জাতিসংঘের তদন্ত দল। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর সরকারি বাহিনীগুলোর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করে। তবে সরকারের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য না পাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে তারা প্রতিবেদন দিতে পারেনি বলে জানিয়েছে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান,
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানায়। বিষয়টি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার বলা হলেও অপরাধ এবং অনেক অপরাধীর তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অপারগতা লক্ষ্য করা গেছে, যা মোটেও কাম্য নয়। এ কারণে তথ্যানুসন্ধান দল তাদের প্রতিবেদন শেষ করতে পারছে না। অবশ্য নতুন করে জানুয়ারির মধ্যভাগে প্রতিবেদন শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় প্রতিবেদনও অসম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।
বিবিসির রিপোর্ট ও একই কথা বলছে জাতিসংঘের টিমকে এখনো পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেয়নি এখনো ইউনূস সরকার।
এদিকে ক্ষমতাচ্যূত আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, মূল তালিকা বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ইউনুসের আজ্ঞাবহ প্রশাসন সহসা জাতিসিংঘের কাছে প্রেরণ করবেনা, কারণ কয়েকশত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে এই অন্তববর্তীকালীন সরকারের ইন্ধনে। নিহতের তালিকা জাতিসিংঘের হাতে পড়লে ইউনূসের ভাবমূর্তির সংকট হবে। এছাড়া আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা বাড়িয়ে বলে আওয়ামী লীগ কে দোষারোপ করা হচ্ছে বলে ভাষ্য তাদের।
পুলিশের সাথে সংঘর্ষ। ছবি- আল জাজিরা
এসব কারণে দেশের বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে নিহতের সংখ্যা নিয়ে এই লুকোচুরি কেন? তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে কারা নিহত হয়েছে জেলাভিত্তিক খোঁজ খবর নেওয়া এক সপ্তাহে কোন কঠিন বিষয় নয়। ‘৬ মাসেও নিহতের সংখ্যা কেন প্রকাশ হয়নি?’ এ প্রশ্ন যেমন উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তেমনি দেশের চায়ের দোকানেও উঠছে। জুলাই ফাউন্ডেশন কিংবা সমন্বয়কদের নেতৃত্বে থাকা ইউনুস সরকার নিহতের তালিকা প্রকাশ করছেনা কেন অথবা জাতিসংঘকে কেন নিহতের তালিকা হস্তান্তর করছেনা সেটা পরিস্কার নয় জনগণের নিকট। মানবাধিকার সংস্থা এবং দেশের মূলধারার সংবাদধ্যমের ভাষ্যের সাথে ক্ষমতাসীনদের তথ্যের আকাশ পাতাল ব্যবধান নাগরিক কমিটি কিংবা বৈষম বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মৃতের সংখ্যা নিয়ে রাজনীতি অর্থাৎ লাশের রাজনীতি’ প্রতীয়মান হয়েছে ট্রু গেজেটের অনুসন্ধানে। জাতিসংঘের কাছে নিহতের তালিকা না দেওয়ায় আরো বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
কোটা না মেধা স্বপ্নই থেকে যাবে শিক্ষার্থীদের? ছবিঃউইকিমিডিয়া,রায়হান
জুলাইয়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘটে যাওয়া যেকোনো ,হত্যাকান্ড, অন্যায়,হামলা অসংগতি আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।। আমাদের এই তালিকা সত্যিকারে যা হয়েছে তার তুলনায় নগণ্য ,আপনাদের কাছে থাকা আরো তথ্য আমাদেরকে দিয়ে সহায়তা করুন। আমাদেরকে ইমেইল করুন info@truegazette.news।
বাংলাদেশের পথে প্রন্তরে,রাজপথে ঘটে যাওয়া যেকোনো অন্যায় অসংগতি আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরি/ধরবো। দেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া যা বলেনা আমরা তা বলি, প্রকাশ করি। আপনাদের কাছে থাকা আরো তথ্য আমাদেরকে দিয়ে সহায়তা করুন, আমরা সত্য প্রকাশে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।